শরীরে এমন কিছু ত্বকজনিত সমস্যা বা রোগ রয়েছে যা ভুক্তভোগি রোগিরা অনেকে গুরুত্ব দেন না। কিন্ত যাদের এই সমস্যাটি রয়েছে তাদের চিকিৎসা প্রয়োজন। চর্মজনিত এই সমস্যাটি হলো শরীর, হাত, পা ও হাতের তালুতে অতিরিক্ত ঘাম ঝড়া। অনেক ছাত্র ছাত্রীদের লিখতে গেলে খাতা ভিজে যায়, পড়তে গেলে বই ভিজে যায়। কারও কারও বাসার বা অফিসের কাজেও অনেক সমস্যা হয়। কোন কিছু ধরতেও অস্বস্থি হয়। সারাদিন ভিজা শরীর, ভিজা বগল, ভিজা হাত, ভিজা জুতা-মোজা এক বিরক্তিকর পরিস্থিতি। অনেক সময় কোথাও কোথাও লজ্জায়ও পড়তে হয়। এই রুগীদের চামড়ার সংক্রমণ বেশী হয়। লেখা পড়ার মনোযোগ নষ্ট হয়, অন্যান্য কাজেরও ব্যাঘাত তৈরী হয়।
তবে এর কিছু কারন রয়েছে । যেমন –
১. অজ্ঞাত
২. বংশগত
৩. রাগ, ভয়, দূশ্চিন্তা,
৪. হাত ও পায়ে ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাক সংক্রমণ।
৫. হরমোন জনিত সমস্যা: ডায়াবেটিস, থাইরয়েড হরমোনের সমস্যা, মাসিকের ও রজ:নিব্রিতির সমস্যা।
৬. বিপাক ক্রিয়ার সমস্যা
৭. ক্যানসার জনিত সমস্যা: লিম্ফোমা, ফিওক্রোমোসাইটোমা।
৮. অটোইমুইন রোগ: রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, এসএলই।
৯. কিছু ঔষধের কারনেও এমনটা হতে পারে।
রোগ নির্ণয় : ইতিহাস জেনে আর শরীর পরিক্ষা করেই বেশীর ভাগ রুগীর রোগ নির্ণয় হয়। তবে কিছু কিছু রুগীর রক্ত পরীক্ষা, হরমোন- বিশেষ করে থাইরয়েডের পরীক্ষা লাগতে পারে। শরীরের কোন কোন অংশে এর প্রকোপ বেশী তা জানার জন্য আয়োডিন স্টার্চ টেষ্ট ও সোয়েট টেষ্টের প্রয়োজন হয়।
চিকিৎসা ঃ
১. কারণ খুজে পেলে তার চিকিৎসা করতে হবে।
২. ড্রাই কেয়ার নামে একটি লোশন ঔষধের দোকানে পাওয়া যায়, ডাক্তারের পরামর্শে সেটি হাত ও পায়ের তালুতে সকালে ও রাতে লাগাতে হয়।
৩. খাবার ঔষধ- প্রোপানথেলিন ব্রোমাইড, এন্টি ডিপ্রেসেন্ট।
৪. কোন কোন রুগীর বটুলিনাম ইনজেকশন প্রয়োজন হয়।
৫. আয়েনটোফোরেসিস চিকিৎসায় অনেকে ভাল ফল পান।
৬. কোন কোন রুগীর সিম্পেথেকটমি অপারেশন বা সোয়েট গ্লান্ড রিমুভাল অপারেশন দরকার হয়।
৭. মাইক্রোওয়েভ থেরাপী দিয়েও সোয়েট গ্লান্ড নষ্ট করা হয়।
আয়োনটোফরেসিস চিকিৎসা পদ্ধতি কি:
আয়োনটোফরেসিস হাত ও পা ঘামার সব চেয়ে কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি । ১৭০০ সাল থেকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই পদ্ধতি ব্যবহার হয়ে আসছে। কিন্ত‘ ১৯৪০ সাল থেকে ব্যাপক ভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে । এখানে একটি মেসিন থাকে, যেটি দূর্বল বিদ্যুৎ তৈরী করে। এই বিদ্যুৎ তারের মাধ্যমে ৪ টি স্টেইনলেস স্টিলের প্লেটে প্রবাহিত হয়। প্লেটের উপর ভিজা টাওয়েল থাকে। রোগী ভিজা টাওয়েলের উপর হাত ও পা রাখে। একটি সেসনে সাধারণত ১৫ থেকে ৩০ মিনিট সময় লাগে। ভালো হওয়ার আগ পর্যন্ত; সপ্তাহে সাধারণত ৩ দিন এই চিকিৎসা নিতে হয়। একবার ভালো হলে সাধারণত অনেক দিন পর্যন্ত রোগীর হাত ও পা ঘামা বন্ধ থাকে।
ডাঃ এস এম বখতিয়ার কামাল
সহকারী অধ্যাপক
ডাঃ কামাল হেয়ার এন্ড স্কীন সেন্টার
বিটিআই সেন্টারা গ্র্যান্ড, ১৪৪ গ্রিন রোড, ফার্মগেট, ঢাকা।