শীত চলে এসেছে। শীতের তীব্রতা যতই বাড়বে, ততই বাড়বে শিশুদের নানা অসুখ। বিশেষ করে সর্দিকাশি, ঠান্ডা, ব্রংকিওলাইটিস, নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, পেটব্যথা, ফুড পয়েজনিং, ডায়রিয়া এবং বিভিন্ন চর্মরোগ ইত্যাদি নানা অসুখে শিশুরা আক্রান্ত হতে পারে।

এসব রোগ থেকে শিশুকে রক্ষা করতে করণীয়:

১. শিশুকে শীতের তীব্রতা থেকে যথাসম্ভব দূরে রাখুন। খুব প্রয়োজন না হলে শিশুকে ঘর থেকে বের করবেন না। রোদ উঠলে তবেই শিশুকে বের করুন। অতি প্রয়োজনে বের করতে হলে ভালো করে শীতের কাপড় জড়িয়ে বের করুন।

২. শিশুর প্রয়োজনে ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে রাখুন। শিশুর গায়ে সব সময় গরম কাপড় জড়িয়ে রাখুন। এ ছাড়া মাথায় টুপি, হাত-পায়ে মোজা পরিয়ে রাখুন। এ সময় আপনার শিশুকে সিনথেটিক কাপড়ের বদলে মোটা সুতির কাপড় পরানোর চেষ্টা করুন। এ ছাড়া গোসলের সময়, পান করার জন্য এবং অন্যান্য কাজে সব সময় কুসুম গরম পানি ব্যবহার করুন।

৩. শিশুকে সব সময় নিরাপদ খাবার, যেমন–ঘরে তৈরি খাবার ও সতেজ ফলমূল খেতে দিন। এক বেলার রান্না করা খাবার অন্য বেলায় না খাওয়ানোর চেষ্টা করুন।

৪. শিশুকে কোলে নেওয়া বা খাবার খাওয়ানো সময় হাতের রোগ-জীবাণু দূর করতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন। শিশুর টয়লেটের পর হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে নিন।

৫. পরিমিত পরিমাণে মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, ডাল, বাদাম ও মৌসুমি শাকসবজি খেতে দিন। বাইরের রেস্টুরেন্টে তৈরি খাবার না খাওয়ানোর চেষ্টা করুন। শিশুকে প্রয়োজনে ঘন ঘন বুকের দুধ খাওয়ান।
৬. সাধারণ সর্দি-কাশির জন্য শিশুদের কোনো ওষুধের প্রয়োজন নেই। ছয় মাসের অধিক বয়সী শিশুদের লেবু, মধু, তুলসি পাতা, আদা, লবঙ্গ ও তেজপাতামিশ্রিত কুসুম গরম পানি বার বার পান করান।

৭. বেশি কাশি হলে বা কাশি না কমলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

৮. যে সব শিশুর শ্বাসকষ্ট বা অ্যাজমা আছে, তাদের চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ খাওয়ান। প্রয়োজনে ইনহেলার কিংবা নেবুলাইজার ব্যবহার করুন। বেশি শ্বাসকষ্ট হলে অনতিবিলম্বে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যান। জীবাণু দূর করতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে দিন। 

৯. শিশুর পাতলা পায়খানা হলে বুকের দুধ ও স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি প্রতিবার পাতলা পায়খানা ও বমির পর ওরস্যালাইন (সঠিক নিয়মে তৈরি করা) খেতে দিন। এ ছাড়া অন্যান্য স্বাভাবিক খাবার, যেমন: খিচুড়ি, ভাত, তরকারি, চিড়া,পাকা কলা, ডাবের পানি, আপেল, আনার ও কাঁচকলা সিদ্ধ প্রভৃতি খেতে দিন।

সবশেষে অবশ্যই মনে রাখবেন যে, বেশির ভাগ শীতকালীন অসুখে অ্যান্টিবায়োটিকের কোনো প্রয়োজন নেই।

১০. যেকোনো গরম জিনিস, গরম পানি আপনার শিশুর নাগালের বাইরে রাখুন।

১১. শিশুদের যত্নে প্রতিদিন কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করান। গোসলের আগে অলিভ অয়েল ম্যাসেজ করুন। গোসলের পর প্রয়োজনে ভালো লোশন লাগাতে পারেন। এতে আপনার শিশুর ত্বক ভালো থাকবে।

১২. যেকোনো বিপদ চিহ্ন যেমন– বুকের দুধ খেতে না পারা, খাবার গিলতে না পারা, খিচুনি হওয়া, শরীর নেতিয়ে পরা, তীব্র শ্বাসকষ্ট হওয়া, শরীর বেশি গরম বা বেশি ঠান্ডা হয়ে যাওয়া, বার বার বমি করা, ইত্যাদি দেখা দিলে শিশুকে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে যান। এই শীতে আপনি আপনার শিশুকে নিয়ে সুস্থ থাকুন, নিরাপদে থাকুন।

 

লেখক:

ডা. সৈয়দ মোহাম্মদ ফারুক

জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ  

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.