ডেঙ্গু জ্বর বেশি হচ্ছে অনূর্ধ্ব ১৫ বছর বয়সী শিশুদের। ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি সেরোটাইপ শনাক্ত হয়েছে। একাধিক টাইপে বা দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হলে রোগের তীব্রতা থাকে অনেক বেশি। ভাইরাস শরীরে প্রবেশের সাধারণত ৪ থেকে ৭ দিনের মধ্যে (৩ থেকে ১৪ দিন) ডেঙ্গু জ্বরের সাধারণ উপসর্গ দেখা দেয়। প্রথম ১ থেকে ৫ দিন হঠাৎ তীব্র জ্বর (প্রায় ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট), সঙ্গে বমিভাব, বমি, র‌্যাশ (উপসর্গের প্রথম বা দ্বিতীয় দিনে ত্বকে লাল ফুসকুড়ি অথবা অসুখের চার থেকে সাত দিনের মধ্যে হামের মতো লাল বিন্দু), হাড়ের জোড়ায় গিঁটে ও মাংসপেশিতে প্রবল ব্যথা ইত্যাদি নিয়ে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকাশ ঘটে। এ সময় অবশ্যই ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে হবে। শিশুকে প্রচুর তরল খাওয়াতে হবে। পূর্ণ বিশ্রামে রাখতে হবে।

কিছু লক্ষণ ‘বিপজ্জনক চিহ্ন’ হিসেবে স্বীকৃত। যেমন-পেটব্যথা, অনবরত বমি, শরীরে পানি জমা, নাকুমাড়ি থেকে রক্তপাত, অতিরিক্ত দুর্বলতা, অস্থিরতা, লিভার স্ফীতি দুই সেন্টমিটারের বেশি, ল্যাব পরীক্ষায় রক্তে হিমাটোক্রিটের মান বৃদ্ধি, অণুচক্রিকা দ্রুত কমতে থাকা। এ রকম কোনো লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। ডেঙ্গু জ্বরের পাঁচ থেকে সাত দিন সময়কালে ‘মারাত্মক ডেঙ্গুর’ চিহ্নগুলো দেখা দিতে পারে।

যেমনÑডেঙ্গু শক সিনড্রোম (যা ৫ শতাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়), শরীরে পানি জমা, নাড়ি দুর্বল, শীতল শরীর (তাপমাত্রা ৯৬.৮ ডিগ্রি ফারেনহাইটের কম), রক্তচাপ বিপজ্জনকভাবে কমা, অতিরিক্ত রক্তপাত, লিভার এএসটি বা এএলটির মান ১০০০ বা বেশি, অচৈতন্য অবস্থা, হার্ট ও অন্যান্য অঙ্গে রোগের লক্ষণ প্রভৃতি।

চিকিৎসা: শিশুর জ্বর হওয়ার প্রথম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। প্রথম দিককার সাধারণ উপসর্গাদি দেখে ‘মৌসুমি জ্বর’ ভেবে অভিভাবকেরা সময়ক্ষেপণ করেন। জ্বর সম্পূর্ণ চলে যাওয়ার ২৪ ঘণ্টার পরে রোগী বেশি অসুস্থতা অনুভব করলে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। পর্যাপ্ত চিকিৎসায় ডেঙ্গুতে মৃত্যুহার ১ শতাংশ। কিন্তু শক দেখা দিলে তা বেড়ে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত হয়।

রোগের জটিলতা থেকে পরে চুল পড়ে যাওয়া, হতাশা, ট্রান্সভার্স মাইলাইটিস ও গিয়েন-বারির মতো স্নায়ুরোগের ঝুঁকি থাকে।
এখনও বৈশ্বিকভাবে ডেঙ্গু প্রতিরোধের প্রধান উপায় ডেঙ্গু মশার কামড় থেকে রক্ষা পেতে পদক্ষেপ নেয়া। শিশুকে ফুল শার্ট, ফুল প্যান্ট ও মোজা পরানো। দিনের বেলায়ও মশারি খাটিয়ে ঘুমানো উচিত।

 

অধ্যাপক ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী

সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.