শরীর যখন একটি অস্বাভাবিক অবস্থাকে শনাক্ত করতে পারে, তখন সেই অস্বাভাবিক অবস্থার কথা অনেক ক্ষেত্রে ব্যথার মাধ্যমে জানান দেয়। ব্যথার চিকিৎসায় সর্বপ্রথম আমাদের কী মনে আসে? বেশির ভাগ বাংলাদেশি উত্তর দেবেনÑব্যথার ওষুধ। কিন্তু ব্যথার ওষুধ কি ব্যথার কারণ নিরাময় করতে পারে? উত্তরটা হলো, ব্যথার ওষুধ বিভিন্ন রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এর অনুভূতি এবং কিছু ক্ষেত্রে প্রদাহ কমাতে পারে; কিন্তু স্নায়ুর চাপ বা মাংসপেশির দুর্বলতা ইত্যাদি উৎসকে নির্মূল করতে পারে না।

এ থেকে সহজেই অনুমান করা যায়, ব্যথার চিকিৎসা ও ব্যথার কারণের চিকিৎসা এক নয়। ঘাড়, কোমর, হাঁটু, কাঁধ ইত্যাদি ব্যথার কারণের চিকিৎসা ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে সম্ভব। গবেষণায় দেখা গেছে, অনেক ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি সার্জারির মতোই কাজ করে। অর্থাৎ ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে সার্জারির সমপর্যায় পরিমাণ ব্যথার কারণ নির্ণয় সম্ভব।

এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, যেকোনো ধরনের ফিজিওথেরাপিই কি ব্যথার কারণ অপসারণে সক্ষম? ফিজিওথেরাপির নামে বাংলাদেশে যেসব চিকিৎসা প্রচলিত আছে, অর্থাৎ নানা রকমের হিট, ইলেকট্রিক শক বা অবৈজ্ঞানিক ব্যায়ামÑ এগুলোকে চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা নাম দিয়েছেন নো ভ্যালু ট্রিটমেন্ট বা মূল্যহীন চিকিৎসা। উন্নত বিশ্বের বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকরা মূলত নির্ভর করেন ব্যথার কারণ নির্ণয়ের ওপর। ব্যথার মূল কারণ নির্ণয়ের পর তার ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসা দেয়া হয় এবং এ ক্ষেত্রে ফল আসে শতভাগ।

তবে বাস্তবে দেখা যায়, উন্নত বিশ্বে রোগ নির্ণয়ের পর রোগীদের ওপর সঠিক ফিজিওথেরাপি প্রয়োগ অনেকটাই সহজ; কিন্তু বাংলাদেশে এটি দুরূহ কাজ। বাংলাদেশে যেমন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্টের অভাব, তেমনি এ দেশের রোগীরাও সচেতন নন। অনেক রোগী আছেন, যারা ইউটিউব বা ফেসবুক ভিডিও দেখে চিকিৎসা কিংবা ব্যায়াম শুরু করে দেন; কেউ বা ফার্মেসি থেকে ব্যথার ওষুধ কিনে তা সেবন করতে শুরু করেন। এ দেশে সবার দোরগোড়ায় বৈজ্ঞানিক ফিজিওথেরাপি পৌঁছে দিতে উন্নতমানের ফিজিওথেরাপি চিকিৎসালয়ের অপ্রতুলতা লাঘব এবং এ বিষয়ে সরকারের আশু মনোযোগ প্রয়োজন।

 

ডা. মোহাম্মদ আলী

বিভাগীয় প্রধান, ফিজিওথেরাপি ও রিহ্যাব বিভাগ

উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.