ত্বক ফর্সা করতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত সেটা গুড়ে গেল বা হীতে বিপরীত হয়েছে, এমন কথা প্রতিদিন অন্তত কোননা কোনো রোগীর কাছ থেকে হলেও শুনতে হয়। এদের মধ্যে এমন অনেকে আছেন যারা মানসিকভাবে হতাশ হয়ে গিয়েছেন, কারণ তারা নিজেকে সৌন্দর্য বাড়াতে রং ফরসাকারি ক্রিম চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে ব্যবহার করেছেন। তাকে ফরসা তো হয়ই নাই বরং ভালো স্কিনকে আরও খারাপ করে ফেলেছেন।

এসব রোগীরা বিভিন্ন রকমের ক্রিম দেখান যেগুলো তারা কোনো ধরনের প্রেসক্রিপশন ছাড়াই বাজার থেকে কিনেছেন। আবার অনেকে আছেন যাদের গায়ের রং কিছুটা মলিন, তাই নিয়ে তারা হিনম্মন্যতায় ভোগেন। ফর্সা হার আশায় তারা ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই বাজারে থাকা বিভিন্ন নামি-বেনামি রং ফর্সাকারী ক্রিম মাখতে শুরু করেন। এই রং ফর্সাকারী ক্রিম এর ক্ষতিকর ও ভালো দিক রয়েছে।

কুফল 

রং ফর্সাকারী ক্রিম ব্যবহারে গায়ের রং খুব কমই ফর্সা হয়। অনেক সময় এই ক্রিম ব্যবহার বন্ধ করে দিলেও ত্বকে নানা সমস্যা দেখা দেয়। ত্বকের কোনো অংশ সাদা আবার কোনো অংশ কালো হয়ে যায়। এই ক্রিম ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করে দিলে পরবর্তীতে গায়ের রং আরও কালো হয়ে যেতে পারে।

কারা বেশি ঝুঁকে এই দিকে-

যাদের গায়ের রং কালো বা শ্যামলা। যাদের মুখে ব্রণ কালো দাগ বা মেছতা আছে, ফর্সা তাদের হতেই হবে বলে যারা বিশ্বাস করেন।

কেন ক্ষতিকর

ফর্সা হওয়ার ক্রিমে মার্কারি, লেড, স্টেরয়েড, নানা প্রিজার্ভেটিভসহ অজস্র রাসায়নিক থাকে; যা আমাদের ত্বকের জন্য যথেষ্ট ক্ষতিকর।

রং ফর্সাকারী ক্রিমে ক্ষতি

ত্বকে ফুসকুড়ি হওয়া,
রং বদলে যাওয়া,
কালশিটে দাগ পড়া।
ব্যাকটেরিয়া ও ফাংগাল সংক্রমণ প্রতিরোধের ক্ষমতা কমে যাওয়া।
উদ্বেগ উৎকণ্ঠা, বিষণœতা, মানসিক অস্থিরতা থেকে বৈকল্য স্নায়ুজনিত সমস্যা হতে পারে।
এই ধরনের স্টেরয়েড মেশানো ক্রিম অকারণে মুখে মাখতে মাখতে পাতলা হয়ে যেতে পারে ত্বক। অতিরিক্ত সূর্য/তাপ সংবেদী হতে পারে ত্বক। ব্রণ ও অবাঞ্ছিত লোম।
মুখে মেছতা পরতে পারে পাশাপাশি মুখে, গলায়, হাতে বিভিন্ন রকমের অ্যালার্জি, র‌্যাশ, হয়। ত্বক শুকিয়ে গিয়ে নিষ্প্রাণ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
যারা নিয়মিত ফর্সা হওয়ার ক্রিম মাখেন, তাদের চোখে জ্বালা থেকে শুরু করে নানা রকম অসুবিধা হতে পারে। মার্কারি থেকে ত্বকের ক্ষতির পাশাপাশি সফট টিস্যুরও সমস্যা হয়। এমনকি ত্বকের ক্যান্সারের শঙ্কাও হয়।
আবার অনেক রং ফর্সাকারী ক্রিম কারণে পরে দেখা যায়, রোদে বের হতে পারছেন না বা অন্য কিছু ব্যবহার করতে পারছেন না। পরে পুরো ত্বকের ব্যাপারটি আয়ত্তের বাইরে চলে যায়।

সুফল ও চিকিৎসা 
এ ধরনের পরিস্থিতি প্রতিরোধ করতে শুরু থেকেই একজন স্কিন ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। ত্বকের সৌন্দর্যের জন্য বাজারের বিভিন্ন নামে-বেনামে রং ফর্সাকারী ক্রিম ব্যবহার না করে একজন স্কিন ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে রেগুলার স্কিন কেয়ার রুটিনটা করা উচিত।

 

লেখক :

ডা. এস এম রাসেল ফারুক

সিনিয়র কনসালটেন্ট
চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ
‘বাংলাদেশ মাল্টিকেয়ার হাসপাতাল। (দ্বিতীয় তলা) রুম নং ২০২
রামপুরা, ডিআইটি রোড ঢাকা।

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.