পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম বা পিসিওএস একটি পরিচিত হরমোনাল সমস্যা,যা প্রতি ১০০ জন নারীর মাঝে ৭ থেকে ৮ জনের দেখা যায়। পিসিওএস আছে এমন ৬০-৭০ শতাংশ নারীর জন্য গর্ভধারণে সমস্যা হয়ে থাকে। দেরিতে গর্ভধারণ বা ইনফার্টিলিটির জন্য পিসিওএস অনেকাংশেই দায়ী। বর্তমানে এ সমস্যাটি আগের চাইতে অনেক বেড়ে গেছে। পিসিওএস নিয়ন্ত্রণে রাখতে মেডিসিনের পাশাপাশি সঠিক খাদ্যাভাস অনুসরণ করা খুবই জরুরি। আজকের ফিচারে আমরা একজন পুষ্টিবিদের কাছ থেকে এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নিবো।

কী কী সিম্পটমস দেখা যায়?

পিসিওএসের বেশ কিছু কমন কিছু লক্ষণ হলো ওজন হঠাৎ করেই বেড়ে যাওয়া, অনিয়মিত পিরিয়ড বা দীর্ঘদিন পিরিয়ড বন্ধ থাকা, পিরিয়ডে খুব কম ব্লিডিং হওয়া কিংবা কালচে ব্লিডিং হওয়া, মুখে অনেক ব্রণ হওয়া, অতিরিক্ত চুল পড়া, চুল পাতলা হয়ে যাওয়া, শরীরে অস্বাভাবিক লোম বৃদ্ধি ইত্যাদি। এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

পিসিওএস নিয়ন্ত্রণে কী কী করতে হবে?

ডায়েট ও লাইফস্টাইলে চেঞ্জ আনলে তা পিসিওএস নিয়ন্ত্রণে অনেকটা উপকারে আসে। তাই সবার আগে এ বিষয়ে জোর দিতে হবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক কী কী করতে হবে-

  • লো ফ্যাট ও লো কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাদ্যতালিকা মেনে চলা।
  • খাবারে প্রোটিনের আধিক্য  রাখা।
  • ডুবো তেলে ভাজা খাবারের পরিবর্তে স্টিম বা অল্প তেলে রান্না করা খাবার খাওয়া।
  • রাতের খাবার তাড়তাড়ি কমপ্লিট করা।
  • নিয়মিত হাঁটা বা বিশেষ কিছু ব্যায়াম করা।

রেগুলার ডায়েটে কী খাবেন?

অনেকেই মনে করেন, হেলদি খাবার মানেই বুঝি খুব এক্সপেনসিভ কিছু। আসলে কিন্তু ব্যাপারটা মোটেও সেরকম নয়। হাতের কাছে অ্যাভেইলেবল খাবারগুলো দিয়েই পিসিওএস পেশেন্টদের রেগুলার ডায়েট সাজিয়ে নেওয়া যায়. কীভাবে? চলুন জেনে নেই-

১) PCOS রোগীর মধ্যে প্রচুর অক্সিডেটিভ স্ট্রেস দেখা দেয়, অতিরিক্ত ফ্রি রেডিক্যালের সাথে মানিয়ে নিতে এ শারীরবৃত্তীয় চাপ তৈরি হয়। এই স্ট্রেস দূর করতে প্রয়োজন অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ রঙিন ও সবুজ শাক সবজি  খাওয়া। সবুজ শাক-সবজি আয়রন, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও বিভিন্ন ধরনের ভিটামিনের উৎস, যা পিসিওএস রোগীদের জন্য উপকারী ভূমিকা পালন করে। এছাড়া আয়রন ও ভিটামিন  দেহের শর্করা ও চর্বি বিপাকে সহায়তা করা ছাড়াও থাইরয়েড ফাংশন ও হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা করে। তাই খাদ্য তালিকায় লাল আলু, মিষ্টি আলু, টমেটো, গাজর, পটল, লেটুস, পালংশাক, কলমিশাক, বাঁধাকপি, ব্রকলি, ক্যাপসিকাম,কুমড়া,স্কোয়াশ ইত্যাদি রাখতে পারেন।

২) ফাইবার, ভিটামিন, খনিজ ও ফাইটো নিউট্রিয়েন্টসহ আরো অনেক পুষ্টি উপাদানে ভরপুর থাকে ফলমূল। পিসিওএস নিয়ন্ত্রণে যেসব ফলে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম থাকে, সেসব ফল খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন।  এসবের মাঝে আম, আপেল, কলা, খেজুর, আঙুর, চেরি, পেয়ারা, লেবু, কমলা, নাশপাতি উল্লেখযোগ্য।

৩) ডাল এবং বাদাম জাতীয় খাবারগুলো খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দেওয়া যাবে না। পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে।  কাঠবাদাম, ওয়ালনাট প্রতিদিন পরিমাণ মত খাওয়ার চেষ্টা করবেন। এছাড়াও ডার্ক চকলেট খেতে পারেন ২-৩ পিস করে।

যে খাবারগুলো অ্যাভয়েড করবেন

যারা পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোমে ভুগছেন, তারা রেগুলার ডায়েটে সাদা আটার রুটি, পেস্ট্রি, মিষ্টি জাতীয় খাবার, সাদা আলু, ময়দায় বানানো খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করবেন। এছাড়াও কোনো রকম প্রসেসড ফুড, ফ্রুট জুস, প্যাকেট স্যুপ, নুডুলস, পাস্তা, বাইরের খাবার, রোল, চাউমিন, কাটলেট, ফুচকা, ডিপ ফ্রায়েড খাবার,কফি, চকলেট, চিনি খাওয়া বন্ধ রাখবেন যতোটা সম্ভব।

পরিশেষে বলতে চাই, পিসিওএস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সঠিক চিকিৎসার পাশাপাশি জীবন যাত্রার পরিবর্তন এবং সঠিক খাদ্যতালিকা মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই। এগুলোর মাধ্যমে নিজের হেলথ কন্ডিশন অবশ্যই ইমপ্রুভ করা সম্ভব। তাই ভয় বা আতংকে না থাকে গাইনী ডক্টরের পাশাপাশি অবশ্যই একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ মতো চলবেন।

লিখেছেন,

সাদিয়া ইসরাত স্মৃতি

নিউট্রিশনিস্ট

ডক্টর সিরাজুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হসপিটাল

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.