নবজাতকের জন্ডিসের সঙ্গে আমরা অনেকেই পরিচিত। সদ্যজাত শিশুর বয়স ২ থেকে ৩ দিন হতে না হতেই গায়ের রং হলুদাভ হয়ে ওঠে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই জন্ডিস কয়েকদিনের মধ্যে কমতে শুরু করে এবং সর্বোচ্চ দুই সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হয়। যাকে আমরা ফিজিওলজিক্যাল জন্ডিস (Physiological Jaundice) বলে থাকি। তেমন কোনও ক্ষতিকর প্রভাব ছাড়াই এ জন্ডিস ভাল হয়ে যায়। কিন্তু এ জন্ডিসই কিছু কিছু ক্ষেত্রে নবজাতকের মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
কখন জন্ডিস উদ্বেগের কারণ
১. নবজাতকের জন্মের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যদি জন্ডিস দেখা দেয় এবং ক্রমান্বয়ে তা বাড়তে থাকে।
৪. হাত ও পায়ের তালু পর্যন্ত জন্ডিস ছড়িয়ে পড়া।
নবজাতকের জন্ডিসের কারণ
২৪ ঘণ্টার মধ্যে হলে–
১. মা ও বাচ্চার ভিন্ন রক্ত গ্রুপজনিত সমস্যা। যেটা অনেক মারাত্মক বিষয়।
২. রক্তের জন্মগত রোগের কারণ। এতে রক্ত কণিকা দ্রুত ভেঙে যায়।
দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে হলে–
১. ফিজিওলজিকাল জন্ডিস।
২. অপর্যাপ্ত বুকের দুধ খাওয়ানোর কারণে সৃষ্ট জন্ডিস।
তিন থেকে সাত দিনের মধ্যে হলে–
১. অপরিণত প্রসবের কারণে
২. রক্তে বিভিন্ন প্রদাহজনিত কারণে।
দুই সপ্তাহের বেশী দিন স্থায়ী হলে–
১. হাইপোথাইরেড রোগ
২. যকৃৎ ও পিত্তনালীর জন্মগত জটিলতাজনিত কারণে
৩. কিছু জন্মগত ভাইরাস প্রদাহের কারণে
চিকিৎসা
আগেই বলেছি, ফিজিওলজিক্যাল জন্ডিস আপনা থেকেই ভাল হয়ে যায়। আগে ধারণা করা হতো, শিশুকে রোদে রাখলে জন্ডিস কমে যায়। এখন দেখা গেছে, এতে শিশুর তেমন কোনও উপকার হয় না। জন্ডিস যদি হাত এবং পায়ের তালু অবদি ছড়িয়ে পড়ে তাহলে ফটোথেরাপি ও এক্সচেঞ্জ ব্লাড ট্রান্সফিউশন শুরু করা আবশ্যক। এ ছাড়া রক্তের প্রদাহ থাকলে যথাযথ অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টিভাইরাল ওষুধের দরকার হয়।
নবজাতকের জন্ডিসজনিত জটিলতা
১. খুব দ্রুত বাড়তে থাকা জন্ডিসের সময়মতো চিকিৎসা না করলে মস্তিষ্কের বিলিরুবিন ঘটিত প্রদাহে প্রথমে খিঁচুনি এবং পরবর্তীতে মৃত্যুও হতে পারে।
২. হাইপোথাইরেড ও পিত্তনালিজনিত সমস্যা থাকলে বেশি দেরি হওয়ার আগেই যথাযথ চিকিৎসা শুরু করতে হবে। তা না হলে শিশু পরবর্তীতে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হতে পারে। এমনকি পিত্তনালীজনিত সমস্যায় যকৃত অকেজো হয়ে অকালে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই যথাসময়ে নবজাতকের জন্ডিসের কারণ নির্ণয় করা অনেক জরুরি।
প্রতিকার
১. শিশুর রক্তের গ্রুপ পজিটিভ ও মায়ের গ্রুপ নেগেটিভ হলে প্রথমে প্রসবের পর মাকে এন্টি ডি ইমুউনোগ্লোবিন ইনজেকশন দিয়ে নিতে হবে।
২. নবজাতককে শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।
৩. বিলিরুবিন লেভেল টক্সিং লেভেলে যাওয়ার পূর্বেই বিলিরুবিন চার্ট অনুযায়ী যথাযথ চিকিৎসা শুরু করতে হবে।
৪. মায়ের টক্সোপ্লাজমা, রুবেলা ও অন্যান্য গর্ভকালীণ প্রদাহজনিত রোগের টিকা প্রদান ও যথাযথ চিকিৎসা করতে হবে।
লেখক:
ডা. জ্ঞানব্রত শুভ্র
আবাসিক চিকিৎসক, বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনিস্টিটিউট