একাধিক দাঁত না থাকলে একটি নির্দিষ্ট সময়ো পর যে কোনো মানুষকে স্বাভাবিক বয়সের চেয়ে বেশি বয়সী মনে হবে। অনেক দাঁত না থাকলে কিছু শব্দ উচ্চারণ করতে সমস্যা সৃষ্টি হয়। অনেক সময় উচ্চারণ ঠিকভাবে বোঝা যায় না। ফলে একটি শব্দ বোঝানোর জন্য একাধিক বার উচ্চারণ করা লাগতে পারে। দাঁত না থাকলে খাদ্যদ্রব্য চর্বন করা সম্ভব হয় না। কোনো কিছু চুষতে সমস্যার সৃষ্টি হয়। পুষ্টিগত সমস্যা হবে। কারণ দাঁত না থাকার ফলে সব ধরনের খাবার খাওয়া যায় না। খাদ্যদ্রব্য চিবানোর জন্য দাঁত অত্যাবশ্যক। এক বা একাধিক দাঁত না থাকার জন্য খাদ্যদ্রব্য চিবানোর ক্ষমতা হ্রাস পায়। ফলে হজমের সমস্যা হতে পারে।
যখন কোনো ব্যক্তির পেছনের একাধিক দাঁত না থাকে তখন তিনি সামনের দাঁত ব্যবহার করে খাদ্য দ্রব্য চর্বনের জন্য। এতে স্বাভাবিক ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং বিদ্যমান অন্যান্য দাঁতের ওপর অধিক চাপ পড়ে। শুধু বিদ্যমান দাঁতে নয় বরং এ চাপ মাড়ি এবং চোয়ালের ওপর পড়ে। এতে করে চোয়ালে ব্যথা হতে পারে। সামনের দাঁত না থাকলে মুখের স্বাভাবিক সৌন্দর্য নষ্ট হয়। আবার দীর্ঘদিন যাবত পিছনের দাঁত না থাকলে মুখের মাংশপেশীর স্বাভাবিক গঠন ব্যাহত হয়। মুখের কাঠামোগত সৌন্দর্য নষ্ট হতে পারে। বেশি বয়সে দাঁত না থাকার কারণে নিচের চোয়াল বা ম্যান্ডিবল যে কোনো দিকে হেলে যেতে পারে। দাঁত না থাকলে স্বাভাবিক অকলুশাল প্লেন নষ্ট হয়ে যায়। অকলুশাল প্লেন বলতে বুঝায় যেখানে ওপরের চোয়াল এবং নিচের চোয়ালের দাঁতগুলো একসাথে মিলিত হয়। অকলুশাল প্লেন পরিবর্তন হয়ে গেলে টেম্পোরোম্যান্ডিবুলার জয়েন্টে ব্যথা হবে। ফলে টেম্পেরোম্যান্ডিবুলার জয়েন্টের যে কোনো ধরনের অচলাবস্থা দেখা দিতে পারে। দাঁতের কামড়ের চাপের সুষম বণ্টন না হওয়ার জন্য এফ্রাকশন বা এক ধরনের দন্তক্ষয় দেখা দিতে পারে।
কারো যদি পেছনের দাঁত না থাকে তাহলে তিনি কামড় মেলানোর জন্য ইচ্ছে করে নিচের চোয়াল বা ম্যান্ডিবল সামনের দিকে প্রসারিত করে থাকে। এটি এক সময় অভ্যাসে পরিণত হয়ে থাকে। ফলে ম্যান্ডিবল বা নিচের চোয়ালের স্থানের বিকৃতি ঘটতে পারে। নিচের চোয়ালের মোলার একটি দাঁত না থাকলে যদি তা দীর্ঘদিন যাবত প্রতিস্থাপন করা না হয়, তাহলে মাধ্যাকর্ষণজনিত শক্তির প্রভাবে উপরের দাঁতটি ধীরে ধীরে নিচে নামতে থাকে। ফলে পরবর্তীতে সমস্যা সৃষ্টি হয়ে থাকে। বৃদ্ধ বয়সে দাঁত না থাকার কারণে চোয়ালের হাড়ের রিজরবশন হয়ে থাকে।
ডা. মো. ফারুক হোসেন
মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ