কুয়াশার চাদরে মুড়ে আসছে শীত। আর শীত মানে নানা রকমের পিঠেপুলির উৎসব। এই পিঠেপুলির বেশির ভাগই তৈরি হয়ে থাকে চিনি, গুড়, চালের গুঁড়া, ময়দা ইত্যাদি উপকরণ দিয়ে। বিভিন্ন রকমের মিষ্টি পিঠেপুলি ঐতিহ্যগতভাবে আমাদের খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে এমনভাবে মিশে গেছে যে, চাইলেও উপেক্ষা করা যায় না।

শীতে পিঠা খাওয়া হবে না, তা মেনে নেওয়া কঠিন। এমতাবস্থায় সব থেকে বিপাকে পড়ে যান বিভিন্ন রোগে ডায়েটে থাকা রোগীরা। যেমন: ওজন কমানো বা ডায়াবেটিক রোগীর ডায়েটে মিষ্টি খাবার একেবারেই নিষিদ্ধ থাকে। এখন প্রশ্ন হলো, এ সকল রোগী কি তাহলে পিঠেপুলি খাওয়া থেকে একেবারেই বঞ্চিত হবেন? আসলে বিষয়টি এমন নয়।  কি পিঠা, তা কেমন উপাদান দিয়ে তৈরি এবং সেটির পরিমাণ ইত্যাদির ওপরে নির্ভর করে পিঠেপুলি ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

সকালে বা রাতে রুটির পরিবর্তে ডায়েটে চিতই পিঠা, চাপটি, খোলাজা পিঠা, মেরা পিঠা, কম মিষ্টি ভাপা পিঠা বা পাটিসাপটা রাখা যেতে পারে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে পরিমাণটা ঠিক করে নেওয়া। ইচ্ছামতো বেশি পরিমাণে পিঠেপুলি খেলে দ্রুত ওজন বেড়ে যাওয়াসহ ডায়াবেটিস বেড়ে গিয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দিতে পারে। রোগীরা ছাড়াও সকল সুস্থ মানুষের ক্ষেত্রেও খেয়াল রাখতে হবে যে, প্রতিবেলা খাবার গ্রহণের সময় খাবারটি সুষম হচ্ছে কিনা।

অর্থাৎ প্রতিবেলা আমরা যখন প্লেটে খাবার সাজাই, তখন খাদ্যের তিনটি মূল উপাদান শর্করা, প্রোটিন ও ফ্যাটসমৃদ্ধ খাবার সঠিক অনুপাতে অবশ্যই থাকতে হবে। মানে সকাল বা রাতের খাবারে রুটির সঙ্গে যেমন সবজি, ডিম বা মাছ বা মাংস ছিল, ঠিক তেমনি পিঠার সঙ্গেও সবজি এবং ডিম বা মাছ বা মাংস অবশ্যই খেতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে রান্নায় ভিন্নতা আনা যেতে পারে।

শীত কিন্তু শুধু পিঠেপুলির নয়। বরং বিভিন্ন শাক-সবজির রঙিন ডালা সাজিয়ে সুস্বাস্থ্যের বর্ণিল বার্তা দেয় শীতকাল। রঙিন শাক-সবজিতে বিভিন্ন রকম ভিটামিন, মিনারেল ও ফাইবারের সঙ্গে বিভিন্ন রকম অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তাই পিঠেপুলির পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণ শাকসবজি খেলে গ্লাইসেমিক লোড বা শর্করার আধিক্যের কারণে রক্তের গ্লুকোজ বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা অনেকাংশে কমে আসে।

সর্বোপরি রোগীর সার্বিক শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদদের পরামর্শ অনুযায়ী পিঠেপুলি খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেকাংশেই কমে আসবে।

 

লেখক:

ফাতেমা তুজ জোহরা

নিউট্রিশন অফিসার, ন্যাশনাল হেলথকেয়ার নেটওয়ার্ক, বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.