কোভিড আতঙ্কিত এ সময়ে গর্ভবতী মা’রা যৌক্তিক কারণেই বেশি আতঙ্কিত। নিয়মমাফিক ডাক্তার চেক-আপের ধারাবাহিকতায় এখন অনেক সতর্ক থাকতে হচ্ছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে টেলিপরামর্শের আশ্রয় নিতে হচ্ছে।

গর্ভাকালীন দাঁত ও মুখের যত্নের বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা থাকা জরুরি। তা না হলে সামান্য অবহেলা থেকে দাঁতে গর্ত, ব্যথা, মুখ ফুলে যাওয়া ও মাড়ি রোগের মতো নানা জটিলতা তৈরি হতে পারে। কারণ এ সময়ে নানা পরিবর্তন মুখের অভ্যন্তরের স্বাভাবিক স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নষ্ট করে যেমন-

* হরমোনাল তারতম্য

* শুরুতে বমি বমি ভাব, বিশেষ করে টুথপেস্টের প্রতি অনিহা

* রুচির পরিবর্তনে টক বা মিষ্টিজাতীয় খাদ্যের প্রতি দুর্বলতা

* শরীরে অতিরিক্ত পুষ্টি চাহিদা

* ক্ষেত্র বিশেষে প্রেগন্যান্সিতে ডায়াবেটিস, হাইপারএসিডিটি বা উচ্চরক্তচাপ হতে পারে

* জরুরি কিছু ওষুধ থেকে মুখের শুষ্কতা।

গর্ভকালীন মুখের যত্ন কেন জরুরি

ডেন্টাল রোগের বেশিরভাগ স্থায়ী চিকিৎসা কেবল টেলিমেডিসিনে দেয়া সম্ভব নয়। প্রয়োজন পড়ে কার্যকর চিকিৎসা আর করোনা মহামারীর এ সময়ে ঘরের বাইরে বের হওয়াটাই ঝুঁকিপূর্ণ তাই মুখের সঠিক যত্নের মাধ্যমে যাতে চিকিৎসকের শরণাপন্ন না হতে হয় সেদিকে মনোযোগী হতে হবে।

গর্ভকালীন প্রথম ও শেষ তিন মাস দাঁত ও মুখের অনেক কার্যকর চিকিৎসা দেয়া যায় না। এ সময়টিকে অত্যন্ত স্পর্শকাতর হিসেবে বিবেচনা করা হয়, ডেন্টাল চেয়ারে অবস্থান, ওষুধ বা এক্স-রে সব বিষয়েই অধিক বিধি-নিষেধ চলে আসে। আবার ডেন্টাল কষ্ট পুষে রাখার সুযোগও নেই কারণ অবহেলার কারণে এ সময়ে ডেন্টাল রোগ থেকে বড় ধরনের জটিলতা তৈরি হতে পারে। উন্নত বিশ্বের কিছু গবেষণা জানায়, অপরিণত শিশু জন্মের পেছনে প্রায় ১৮ শতাংশ দায়ী মাড়ি রোগ। বিকলাঙ্গ বা অপুষ্ট শিশু জন্মের পেছনেও মায়েদের ডেন্টাল রোগের সম্পর্ক মিলছে।

কোভিডের এ সময়ে গর্ভবতী মা’রা অনেক সময় তাদের নির্ভরযোগ্য প্রসূতি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা অন্য কোনো সূত্র থেকে করোনারোধক নানা দিক-নির্দেশনা দেখে মানার চেষ্টা করছে বা সামান্য জ্বর বা কাশিতে নানা ওষুধ বা বিশেষ কোনো ব্যায়াম করছে, যা অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই এ ধরনের দিক-নির্দেশনা বা যে কোনো ওষুধ সেবনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া বাঞ্ছনীয়।

গবেষকরা এখন পর্যন্ত কোভিড গর্ভবতী নারীদের গর্ভের শিশু আক্রান্তের প্রমাণ পাননি, তবে অবহেলিত মুখের অভ্যন্তরে কিছু ব্যাকটেরিয়া কোভিড রোগীদের দুর্বল ফুসফুসে গিয়ে ভয়ংকর ব্যাকটেরিয়াল জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে।

করণীয়

* গর্ভধারণ সিদ্ধান্তের শুরুতে ডেন্টাল চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া ও দাঁত পরিষ্কার এবং ফ্লস ব্যবহারের সঠিক নিয়ম শেখা।

* নিয়ম মেনে সকালে নাস্তার পর ও রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ২ মিনিট ধরে ছোট মাথার নরম টুথব্রাশ ও মানসম্মত পেস্ট দিয়ে দাঁতের সব পৃষ্ঠ পরিষ্কার ও ডেন্টাল ফ্লস করা।

* মর্নিং সিকনেস বা বমি বমি ভাব নিয়ন্ত্রণে ব্রাশের সময় মনকে অন্যদিকে যেমন ভালো কোনো স্মৃতি, আল্লাহকে স্মরণ বা গান শোনা যেতে পারে। বমি হলে তার এক ঘণ্টার মধ্যে ব্রাশ না করা শ্রেয়। খুব অস্বস্তি হলে পেস্ট ছাড়া ব্রাশ ব্যবহার ও মাড়ি ম্যাসাজ করতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শে ফ্লোরাইড বা অন্য কোনো জীবাণুনাশক মাউথওয়াশ ব্যবহার করা যেতে পারে।

* পুষ্টিকর খাবারে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। গর্ভধারণের ছয় সপ্তাহ থেকে গর্ভের শিশুর দাঁত গঠনপ্রক্রিয়া শুরু হয়, এ সময়ে প্রচুর ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবারের প্রয়োজন পড়ে। মিষ্টিজাতীয় খাবারের পরিবর্তে শরীরের অবস্থার ওপর নির্ভর করে চিকিৎসকের পরামর্শে স্বাস্থ্যবান্ধব খাবার গ্রহণ করতে হবে।

* মুখের যে কোনো অস্বাভাবিকতায় ডেন্টাল চিকিৎসকের টেলিপরামর্শ নেয়া জরুরি। চিকিৎসক কষ্টের ধরন ও গর্ভকালীন সময় বুঝে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা দেবেন।

 

 

লেখক :

ডা. মো. আসাফুজ্জোহা রাজ 
কলাবাগান রাজ ডেন্টাল সেন্টার, সদস্য সচিব, বিএফডিএস

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.