ক্যানসারের কিছু লক্ষণ আছে, যেটি মানুষ নিজের অজান্তেই এড়িয়ে যায়। অথচ এগুলো শুরুতে ধরা পড়লে চিকিৎসা অনেক সহজ হয়। একেবারে শুরুর দিকে শনাক্ত করা গেলে সব ক্যানসার সারিয়ে তোলাও সম্ভব। অবশ্য অনেক পরে ধরা পডলে আর নিরাময় সম্ভব হয় না। প্রায়ই দেখা যায়, সুস্থ জীবনযাপন করছেন একজন ব্যক্তি হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়লেন। পরে পরীক্ষা করে দেখা গেল তার ক্যানসার হয়েছে। এর মধ্যে তার কিছু লক্ষণও হয়?তো শরীরে দেখা দিয়ে?ছিল, কিন্তু সেগুলো তিনি বুঝতে পারেননি অথবা গুরুত্ব দেননি।

পরে দেখা গেল বিলম্ব করায় ক্যানসার পুরো শরীরে অনেক বেশি ছড়িয়ে পড়েছে। তাই নিচের ১০টি লক্ষণ দেখা দিলে কখনোই অবহেলা করা সমীচীন নয়।

কারণ ছাড়া ওজন কমে যাওয়া: ক্যানসার আক্রান্ত বেশিরভাগ মানুষই কোনো না কোনো সময় ওজন হারাতে শুরু করে। কোনো কারণ ছাড়া ওজন হারাতে থাকলে এটিকে বলা হয় ব্যাখ্যাহীন ওজন হারানো। এতে চিন্তার কারণ আছে। ব্যাখ্যাহীনভাবে বা কোনো কারণ ছাড়াই ৫ কেজি বা এর বেশি ওজন কমলে, সেটি ক্যানসারের প্রথম লক্ষণ হতে পারে।

অগ্ন্যাশয়, পাকস্থলী, খাদ্যনালি বা ফুসফুসের ক্যানসারের ক্ষেত্রে ওজন কমে যাওয়ার এই লক্ষণ বেশি দেখা যায়।

জ্বর: ক্যানসার আক্রান্ত রোগীর সবচেয়ে সাধারণ একটি উপসর্গ হচ্ছে জ্বর। অবশ্য যে স্থানে ক্যানসার উৎপন্ন হয়েছে, সেখান থেকে দেহের অন্যান্য স্থানে ছড়িয়ে পড়া শুরু হলে তখন প্রায়ই জ্বর দেখা দেয়। ক্যানসারে আক্রান্ত সবাই কোনো না কোনো সময় জ্বরে ভোগেন। বিশেষ করে, যদি ক্যানসার বা এর চিকিৎসা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর প্রভাব ফেলে, তাহলে জ্বর বেশি হয়।

অনেক ক্ষেত্রে জ্বর ক্যানসারের প্রাথমিক উপসর্গও হতে পারে। যেমন লিউকেমিয়া বা লিম্ফোমা।

ক্লান্তি: এখানে ক্লান্তি বলতে বোঝায় চরম ক্লান্তিভাব, যা বিশ্রাম নেয়ার পরও দূর হয় না। ক্যানসার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপসর্গ হিসেবে দেখা দিতে পারে। কিছু কিছু ক্যানসার যেমন লিউকেমিয়ার ক্ষেত্রে শুরুর দিকেই ক্লান্তি দেখা দিতে পারে।

কোলন বা মলাশয় ও পাকস্থলীর ক্যানসারের ক্ষেত্রে রক্তপাত হতে পারে, তবে এটা সবক্ষেত্রে হয় না। এর কারণেও ক্যানসারের সময় ক্লান্তি দেখা দিতে পারে।

ত্বকে পরিবর্তন: ত্বকের ক্যানসার ছাড়াও আরও কিছু ক্যানসার রয়েছে, যাতে আক্রান্ত হলে ত্বকে পরিবর্তন দেখা দিতে পারে। এর লক্ষণ ও উপসর্গের মধ্যে রয়েছে:

* ত্বক কালো হয়ে যাওয়া বা হাইপারপিগমেনটেশন

* ত্বক ও চোখ হলুদ হয়ে যাওয়া বা জন্ডিস

* ত্বক লাল হয়ে যাওয়া। চুলকানি মাত্রাতিরিক্ত চুলের বৃদ্ধি অন্ত্রের ক্রিয়া বা মূত্রাশয়ের কার্যক্রমে পরিবর্তন

* কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া বা মলের আকারে দীর্ঘদিন ধরে পরিবর্তন মলাশয়ের ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে।

অন্যদিকে প্রস াব করার সময় ব্যথা, প্রস  াবে রক্তপাত বা মূত্রাশয়ের কার্যক্রমে পরিবর্তন যেমনÑ আগের  তুলনায় কম বা বেশি প্রস্রাব করা ইত্যাদি মূত্রাশয় বা প্রোস্টেট ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে।

যে ক্ষত ভালো হয় না: অনেকেই জানেন, দেহে যদি আঁচিল থাকে যেটি বাড়ে বা ব্যথা হয় বা সেটি থেকে রক্তপাত হয়, তাহলে সেটি ত্বকের ক্যানসারের একটি লক্ষণ হতে পারে। কিন্তু শরীরে যদি কোনো ক্ষত থাকে, যেটি চার সপ্তাহের পরও ভালো হয় না বা সেরে যায় না, এমন ক্ষতের প্রতিও লক্ষ রাখা উচিত।

মুখে যদি এমন কোনো ক্ষত হয়, তাহলে সেটি মুখের ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে। মুখের যে কোনো পরিবর্তন দীর্ঘ সময় ধরে থাকলে অবশ্যই একজন চিকিৎসক বা ডেন্টিস্টের পরামর্শ নেয়া উচিত।

শিশ্ন বা জরায়ুতে ক্ষত হয়ে কোনো ধরনের সংক্রমণ কিংবা ক্যানসারের প্রাথমিক অবস্থার লক্ষণ হতে পারে। এমন অবস্থায় একজন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর পরামর্শ নেওয়া উচিত।

রক্তপাত: ক্যানসারের ক্ষেত্রে প্রাথমিক অবস্থায় কিংবা তা ছড়িয়ে পড়ার পর অস্বাভাবিক রক্তপাত হতে পারে। কাশির সঙ্গে রক্তপাত ফুসফুসের ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে। অন্যদিকে যদি মলের সঙ্গে রক্তপাত হয় তাহলে এটি মলাশয় বা মলদ্বারে ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে। এনডোমেট্রিয়াম বা জরায়ুর আবরণে সার্ভিক্যাল ক্যানসারের কারণে যোনিপথে অস্বাভাবিক রক্তপাত হতে পারে। এ ছাড়া মূত্রের সঙ্গে রক্ত পড়লে সেটি মূত্রাশয় বা কিডনি ক্যানসারের কারণে হতে পারে। স্তনবৃন্ত বা স্তনের বোঁটা থেকে রক্ত-মিশ্রিত তরল বের হলে সেটি স্তন ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে।

শরীরের যে কোনো স্থান শক্ত হয়ে যাওয়া: অনেক ক্যানসার ত্বকের মাধ্যমে শনাক্ত করা যেতে পারে। এ ধরনের ক্যানসার সাধারণত স্তন, অণ্ডকোষ, গ্রন্থি এবং শরীরের নরম টিস্যুতে হয়ে থাকে।

এ ক্ষেত্রে দেহে শক্তভাব বা মাংস জমে আছেÑএ ধরনের অনুভূতি হয়। এটা এসব ক্যানসারের প্রাথমিক বা বিলম্বিত উপসর্গ হতে পারে।

গিলতে অসুবিধা: ক্রমাগত বদহজম বা কোনো কিছু গিলতে গেলে সমস্যা হলে সেটি পাকস্থলী বা গলার ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে।

তবে যাই হোক না কেন, এই প্রতিবেদনে উল্লিখিত সব উপসর্গই ক্যানসার ছাড়াও অন্য আরও অনেক কারণে দেখা দিতে পারে।

টানা কাশি বা কণ্ঠস্বরে পরিবর্তন: টানা কাশি ফুসফুসের ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে। তিন সপ্তাহের বেশি সময় কাশি থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। এ ছাড়া কণ্ঠস্বরে পরিবর্তন এলে তা স্বরযন্ত্র বা থাইরয়েড গ্রন্থিতে ক্যানসারের উপস্থিতি নির্দেশ করতে পারে।

 

ডা. নওসাবাহ নূর

সহকারী অধ্যাপক, মেডিসিন, পপুলার মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.