পাকস্থলীর ক্যানসার বিশ্বব্যাপী সব ক্যানসারের মধ্যে পঞ্চম এবং ক্যানসার-সংক্রান্ত মৃত্যুর তৃতীয় প্রধান কারণ। পাকস্থলীর ক্যানসার হলো সবচেয়ে প্রাণঘাতী ম্যালিগন্যান্ট টিউমারগুলোর মধ্যে একটি।

কারণ: হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমণ এই ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। এছাড়া লবণাক্ত খাবার, ধোঁয়াযুক্ত বা প্রক্রিয়াজাত খাবার, নাইট্রেট, নাইট্রাইট এবং সেকেন্ডারি অ্যামাইনযুক্ত খাবার, অ্যালকোহল সেবন, তামাক ব্যবহার পাকস্থলী ক্যানসারের কারণ হিসেবে বিবেচিত। বয়স ৬০-এর বেশি; স্থূলতা; আলসার রোগের জন্য আংশিক গ্যাস্ট্রেক্টমির প্রায় ২০ বছর পর; দীর্ঘস্থায়ী গ্যাস্ট্রাইটিস বা পাকস্থলীর প্রদাহ; যাদের পাকস্থলীর ক্যানসারের পারিবারিক ইতিহাস আছে (যেমন বাবা-মা, ভাই-বোন, বা ছেলে-মেয়ে); পারিবারিক ক্যানসার সিনড্রোম, যেমন পারিবারিক অ্যাডেনোমেটাস পলিপোসিস; বংশগত নন-পলিপোসিস কোলোরেক্টাল ক্যানসার ও বংশগত ডিফিউজ গ্যাস্ট্রিক ক্যানসার; জিনগত পরিবর্তন; এপস্টাইন-বার ভাইরাস সংক্রমণ; পারনিসিয়াস অ্যানিমিয়া; গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ ও এ রক্তের গ্রুপসম্পন্ন ব্যক্তিদের ঝুঁকি বেশি। ধাতুশ্রমিক, খনিশ্রমিক, রাবারশ্রমিক এবং সেই সঙ্গে কাঠ বা অ্যাসবেস্টস নিয়ে কাজ করা মানুষ বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। খুব উচ্চ মাত্রার বিকিরণের সংস্পর্শে থাকলেও পাকস্থলী ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

লক্ষণ

প্রাথমিক পর্যায়ে পাকস্থলীর ক্যানসারের সাধারণত কোনো লক্ষণ থাকে না এবং এটি শনাক্ত করা কঠিন। সাধারণত ক্যানসার ছড়িয়ে পড়ার পর লক্ষণগুলো শুরু হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে যে লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারেÑবদহজম ও পেটে অস্বস্তি; খাওয়ার পর পেট ফুলে যাওয়া; বমি বমি ভাব; ক্ষুধামান্দ্য; অম্বল বা বুক জ্বালাপোড়া করা ইত্যাদি। আরও অ্যাডভান্সড স্টেজে প্রাথমিক পর্যায়ের লক্ষণগুলোর সঙ্গে আরও কিছু উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে আছে মলের সঙ্গে রক্ত যাওয়া বা কালো পায়খানা হওয়া; বমি; ওজন হ্রাস; পেটব্যথা; জন্ডিস (চোখ ও ত্বক হলুদ হয়ে যাওয়া); পেটে পানি জমা।

চিকিৎসা: চিকিৎসা নির্ভর করে ক্যানসারের স্টেজের ওপর। অবস্থা বুঝে অস্ত্রোপচার (টিউমারের অবস্থান ভেদে পাকস্থলীর কিছু অংশ বা পুরোটা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অপসারণ করা), কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপিও টার্গেটেড ড্রাগ থেরাপি দেয়া হয়। কেমোথেরাপি সাধারণত সার্জারির পর দেয়া হয়। কিন্তু কখনও কখনও সার্জারির আগেও দেয়া হয়।

করণীয়: যেহেতু এটা খারাপ ধরনের ক্যানসার, তাই প্রতিরোধে সচেতনতা বেশি দরকার। এ ব্যাপারে করণীয় হলো ধূমপান পরিহার করা; এইচ পাইলোরি ইনফেকশন থাকলে তা নির্মূল করা; খাদ্যাভ্যাসের ইতিবাচক পরিবর্তন; ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা; নিয়মিত ব্যায়াম করা; মদ্যপান পরিহার করা; অ্যাসপিরিন বা অন্যান্য এনএসএআইডিএস-জাতীয় ওষুধ, যেমন আইবুপ্রফেন অথবা ন্যাপ্রকজেন সোডিয়াম-জাতীয় ওষুধ বিনা পরামর্শে সেবন না করা।

 

 

ডা. মো. একরামুল হক জোয়ার্দ্দার

ক্যানসার সার্জারি বিশেষজ্ঞ, জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, মহাখালী, ঢাকা

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.