গর্ভধারণকালে ভ্রূণ নানা অনিষ্ট পরিবেশের প্রভাবে বা ক্ষতিকর কিছুর সংস্পর্শে এলে শিশু জন্মত্রুটি নিয়ে বেড়ে ওঠে। বিশেষ করে গর্ভকালীন প্রথম তিন মাস, যখন গর্ভস্থ শিশুর সামগ্রিক বিকাশ ঘটে সেই সময়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভ্রূণের অনিষ্ট করে থাকে অ্যালকোহল পান, রেডিয়েশন (যেমন এক্স–রে করানো), ইনজুরি, বিনা প্রেসক্রিপশনে ওষুধ সেবন, গাছগাছড়ার ঔষধি গ্রহণের ইতিহাস।

বাহ্যিকভাবে বিকৃতি যত ছোটখাটোই হোক, সেই শিশুকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করে দেখা দরকার। তার অন্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গে আরও কোনো ত্রুটি বা বিকৃতি আছে কি না তা–ও নিশ্চিত করতে হবে।

জন্মগত ত্রুটি প্রধানত দুই ধরনের

  • মাইনর বা মৃদু প্রকৃতির ত্রুটি ততটা জটিল বলে মনে করা হয় না। যেমন অতিরিক্ত স্তনবোঁটা থাকা। ৭-১৪ শতাংশ নবজাতকের কমপক্ষে একটা মাইনর জন্মগত ত্রুটি থাকে। এমন ত্রুটি ছেলেশিশুর বেশি হয়।
  • মেজর বা বড় রকমের ত্রুটি শিশুর শারীরিক সমস্যা তৈরি করে; সঙ্গে সামাজিক সমস্যাও। যেমন কাটা ঠোঁট, কাটা তালু। জন্মগত প্রধান ত্রুটিগুলো হলো মুখমণ্ডল বা ত্বকের ত্রুটি। এ ছাড়া বাড়তি আঙুল, মেরুদণ্ড–মজ্জা ও রক্তনালির টিউমার, পায়ুপথ সম্পূর্ণ না থাকা, হার্টে ছিদ্র ইত্যাদি।

ব্যবস্থাপনা

  • পারিবারিক ইতিহাস: মায়ের বয়স, নিকট আত্মীয়ের মধ্যে বিয়ে কি না, পরিবারের আর কোনো শিশুর জন্মগত ত্রুটি বা বৃদ্ধি-বিকাশঘটিত সমস্যা আছে কি না, জানতে হবে।
  • শিশুর শারীরিক পরীক্ষা ও ল্যাব টেস্ট: বিশেষত শিশু যদি বৃদ্ধি-বিকাশে পিছিয়ে থাকে তবে পরীক্ষা করাতে হবে। তার কানে শোনা, চোখে দেখা ঠিক আছে কি না, নিশ্চিত হতে হবে। থাইরয়েড হরমোন টেস্ট, প্রয়োজনে এমআরআই ইমেজিং দরকার হতে পারে।
  • ক্রোমোসোমাল স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট রোগনির্ণয়, যেমন ডাউন সিনড্রোম বা টার্নার সিনড্রোম করা।
  • রোগনির্ণয় সুনির্দিষ্ট হলে এর (জেনেটিক কাউন্সেলিং, সার্জারি বা ওষুধ) চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা।

গর্ভস্থ শিশুর জন্মগত ত্রুটি আগেভাগে নির্ণয় করা সম্ভব গর্ভকালে মায়ের রক্তে আলফা ফিটো প্রোটিনের মান, অ্যামনিওসেনটেসিস বা কোরিওভিলাস বায়োপসি, জন্মপূর্ব আলট্রাসাউন্ড ইত্যাদির সাহায্যে।

জন্মগত ত্রুটি এড়াতে সতর্কতা

  • সন্তান জন্মদানে পরিকল্পনা।
  • সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা থাকলে যেকোনো ওষুধ সেবনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।
  • গর্ভধারণকালে ওষুধ সেবনের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ। কোনো আয়ুর্বেদি, হারবাল, কবিরাজি ওষুধ সেবন না করা।
  • ডায়াবেটিস, থাইরয়েড, উচ্চ রক্তচাপ, অটোইমিউন রোগ ইত্যাদি থাকলে গর্ভধারণের আগেই তা নিয়ন্ত্রণ করা ও দরকার হলে ওষুধ পরিবর্তন।
  • গর্ভধারণকালে কোনো তেজস্ক্রিয় পদার্থের সংস্পর্শে আসা, যেমন এক্স–রে, সিটি স্ক্যান, রেডিও আয়োডিন টেস্ট ইত্যাদি না করা।
  • ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী
  • অধ্যাপক ও সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.