লাউ অতি সুন্দর একটি নিয়ামত আল্লাহর। লাউ বললে সবাই চেনে। খুবই জনপ্রিয় সবজি এই লাউ। বিশেষজ্ঞরা বলেন, সবজির মধ্যে লাউ ও পেঁপের কোনো ক্ষতিকর দিক নেই। এ দুটো সবজি কাঁচা, রান্না, পাকা, ভাজা, ভর্তা, তরকারি যেভাবেই খাওয়া হোক কোনো ক্ষতি করে না; বরং উপকার করে। লাউকে অনেকে দুধের সাথে তুলনা করেন। অর্থাৎ দুধের মধ্যে যেসব উপাদান রয়েছে, লাউয়ের মধ্যে তার সবই আছে। লাউ এখন শীতের সবজি নয়, সারা বছরই পাওয়া যায়। লাউয়ের খোসা, বিচি, শাক, ডগা সবই খাদ্য এবং উপকারী। লাউ লম্বা ও গোল দুই প্রকারই হয়। ভারত ও বাংলাদেশের সর্বত্র লাউয়ের চাষ হয়। ব্যবসায় ভিত্তিতে কৃষক জমিতে চাষ করেন। সাধারণ লোক বাড়ির আঙিনায় দু-তিনটি বীজ পুঁতে দিয়ে গাছ ঘরের চালে তুলে দেয়। চালে লতিয়ে চলে অনেক ডগা বের করে। লাউগাছের গোড়ায় পচা জৈবসার দিয়ে প্রতিদিন পানি ঢালতে হয়। লাউয়ের ফুল সাদা। লাউ হজমশক্তি বৃদ্ধি ও ক্ষুধামন্দা দূর করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। যক্ষ্মা রোগেও লাউ উপকারী। গর্ভবতী মায়ের জন্য হিতকর।

চলুন তাহলে জেনে নেই বটল গোর্ড বা লাউয়ের কিছু বিস্ময়কর স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে।

কার্যকর উপাদান ঃ প্রতি ১০০ গ্রাম লাউয়ে আছে ০.২ গ্রাম আমিষ, ২.৫ গ্রাম শর্করা,০.৬ গ্রাম আঁশ, ০.১ গ্রাম চর্বি, ১২ কিলোক্যালরি শক্তি, ২০ মি. গ্রাম ক্যালসিয়াম, ১০ মি. গ্রাম ফসফরাস ও ০.৪৬ মি. গ্রাম লৌহ। এছাড়াও সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, জিংক, সেলেনিয়াম এবং ভিটামিন এ, বি-কমপ্লেক্স সি ছাড়াও এতে ফলিক এসিড, ওমেগা-৬ ফ্যাটি এসিড আছে। ঔষধি গুণ ঃ অর্শরোগে ঃ অর্শরোগীর যদি পায়খানা না হয়, মলদ্বার দিয়ে ফোঁটায় ফোঁটায় রক্ত পড়ে এবং মলত্যাগ করলেও পেট পরিস্কার না হয়; তবে লাউ ঝলসে নিয়ে নিংড়ে রস বের করে সামান্য চিনি মিশিয়ে খাওয়ালে সমস্যা চলে যায়।

* মেছতা রোগে ঃ যাদের মুখমন্ডলে মেছতা বা দাগ হয়েছে, তারা প্রতিদিন এক টুকরো লাউ ঝলসে নিয়ে মুখে ঘষলে দাগ উঠে যাবে।
* শ্বেতিরোগে ঃ সদ্য শ্বেতি দেখা দিলে আক্রান্ত স্থানে লাউ ফুল রগড়ে লাগালে ভালো হয়। তবে পুরানো বা বহু দিন হলে কাজ হয় না।

* পিত্তশ্লেস্মাজনিত জ্বরে ঃ জ্বরের সাথে গায়ে জ্বালা, বমি বমি ভাব হলে লাউ আগুনে ঝলসে তিন-চার চামচ রস বের করে আধা চামচ মধু মিশিয়ে খাওয়ালে গায়ের জ্বালা ও বমি বমি ভাব দূর হয়।

* পায়োরিয়া রোগে ঃ যাদের দাঁতে পায়োরিয়া সমস্যা আছে, তারা লাউ ঝলসে নিয়ে রস বের করে ১০ মিনিট মুখের ভেতর রেখে ফেলে দেবে। ১০ দিন এই নিয়ম অনুসরণ করলে পায়োরিয়া ভালো হয়ে যায়।

উপকারিতা ঃ লাউ ঠান্ডা ও মধুর রস। বল-বীর্য বর্ধক। কোষ্ঠ পরিস্কারক। শরীর মস্তিস্ক ঠান্ডা রাখে। লাউয়ের বিচি দিয়ে ওষুধ তৈরি হয়। লাউ হার্টের জন্য উপকারী। পিত্ত ও কফনাশক। গর্ভবতী মায়ের জন্য হিতকর। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। যক্ষ্মা রোগেও লাউ উপকারী। উচ্চ রক্তচাপের রোগীর জন্য ভালো। পিত্ত ও চর্মরোগে উপকারী। অজীর্ণ রোগের জন্য লাউ এক প্রকার ওষুধ। অর্শ রোগীর জন্য লাউ খুবই উপকারী। কর্চি লাউয়ের পায়েস রক্তপিত্তের জন্য ওষুধ। ডায়াবেটিক রোগীদের জন্যও লাউ উপকারী। লাউ পাকস্থলীর সমস্যা দূর করনে ও এর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে কার্যকর।

মো: লোকমান হেকিম

চিকিৎসক-কলামিস্ট,
মোবা: ০১৭১৬২৭০১২০

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.