উচ্চ রক্তচাপ নীরবে হƒৎপিণ্ড, বৃক্ক ও চোখের ক্ষতি ডেকে আনে। উচ্চ রক্তচাপ শনাক্ত হলে এটি নিয়ন্ত্রণে জীবনযাপনের পরিবর্তনের পাশাপাশি ওষুধ সেবন করতে হয়। তবে সঠিকভাবে রক্তচাপ পরিমাপ জরুরি।

কীভাবে রক্তচাপ মাপা উচিত: রোগীকে আরামপ্রদ অবস্থায় চেয়ারে পিঠ লাগিয়ে বসতে হবে। বসে রক্তচাপ পরিমাপ হলো আদর্শ। হাত রাখতে হবে হƒৎপিণ্ড বরাবর। হাত ঝুলিয়ে দিলে কিংবা পা ক্রস করে বসলে রক্তচাপ সামান্য বেশি হতে পারে; শোয়া, বসা কিংবা দাঁড়ানো অবস্থায় রক্তচাপ ভিন্ন হয়ে থাকে। সাধারণত শোয়া অবস্থায় যে রক্তচাপ থাকে, দাঁড়ানো অবস্থায় তা সামান্য কমে যায়। সিস্টোলিক রক্তচাপ ২০ এবং ডায়াস্টোলিক ১০ কমে গেলে তাকে বলে পশ্চুরাল হাইপোটেনশন।

বয়স্ক কিংবা ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে এই তারতম্য বেশি হয়ে থাকে। এমনটি হলে বসা থেকে দাঁড়ালে চোখে ঝাপসা লাগে। মাথা ঘোরায়। সেজন্য বয়স্ক কিংবা ডায়াবেটিস রোগীদের শায়িত ও দাঁড়ানোÑদুই অবস্থায় রক্তচাপ মাপা দরকার; রক্তচাপ পরিমাপের ৩০ মিনিট আগে কোনো খাবার কিংবা পানীয় গ্রহণ করা যাবে না; মূত্রথলি পূর্ণ অবস্থায় রক্তচাপ মাপা ঠিক নয়। সেজন্য প্রেশার মাপার আগে প্রস্রাব করে নেওয়া ভালো; রক্তচাপ মাপার আগে পাঁচ মিনিট অন্তত চেয়ারে বিশ্রাম নিতে হবে; দিনে-রাতে বিভিন্ন সময় রক্তচাপ বিভিন্ন হতে পারে। সবচেয়ে কম রক্তচাপ থাকে সকালে আর সবচেয়ে বেশি থাকে বিকাল ৪টা থেকে ৬টার মধ্যে। রক্তচাপ পরিমাপের আদর্শ সময় সকাল। ঘুম থেকে ওঠার পর প্রস্রাব-পায়খানা সেরে পাঁচ মিনিট বিশ্রাম নিন। চা, কফি কিংবা কোনো ওষুধ গ্রহণের আগে রক্তচাপ মাপুন। এ সময়ে কোনো পত্রপত্রিকা কিংবা ই-মেইল পড়া থেকে বিরত থাকুন। এগুলো আপনার রক্তচাপের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। মিনিট খানেক ব্যবধানে দুবার রক্তচাপ মাপুন।

রক্তচাপ মাপার সময় প্রেশার কাফ যাতে হাতে ঢিলেঢালাভাবে না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আঁটসাঁট কিংবা মোটা কাপড়ের ওপরে প্রেশার পরিমাপ করা ঠিক নয়। রক্তচাপ মাপার কাফ ত্বকের সংস্পর্শে থাকলে সবচেয়ে ভালো। কাফ হতে হবে সঠিক মাপের। অতি স্বাস্থ্যবান মানুষের জন্য আলাদা কাফ ব্যবহার করতে হবে। ছোটদের জন্য রক্তচাপ পরিমাপের কাফ হবে ছোট। নয়তো রক্তচাপ পরিমাপ সঠিক হবে না। রক্তচাপ পরিমাপের সময় কথাবার্তা বলা যাবে না।

 

ডা. লে. কর্নেল নাসির উদ্দিন আহমদ

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, সিএমএইচ, বরিশাল

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.