মেচতা বা মেলাসমা বিব্রতকর এক সমস্যা। সাধারণত গালের দুই দিকে কালো বা খয়েরি, হালকা বাদামি দাগের মতো করে মেচতা পড়ে থাকে। তবে চিবুক, নাক, কপাল, এমনকি বাহুতেও মেচতা দেখা দিতে পারে। মেয়েদের মেচতা হওয়ার হার ছেলেদের তুলনায় বেশি, বিশেষ করে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের প্রায়ই মেচতা সমস্যায় ভুগতে দেখা যায়।

কেন হয়

মেচতার পেছনে প্রধানত দুটি বিষয় কাজ করে। এক. হরমোন। গর্ভাবস্থায় ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন হরমোন বেড়ে গেলে মেচতা দেখা দেয়। আবার জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খেলেও মেচতা হয়। মেনোপজের পর যাঁরা হরমোন থেরাপি নেন, তাঁদেরও মেচতা হতে পারে। হাইপোথাইরয়েড রোগীদেরও মেচতা হয়।

দুই. আলোক সংবেদনশীলতা। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি বা ইনফ্রারেড রশ্মির সংস্পর্শে মেচতা হয়। এমনকি ল্যাপটপ, মুঠোফোন বা টেলিভিশনের এলইডি স্ক্রিনের অতি সংস্পর্শে এটি বাড়তে পারে। কিছু ওষুধ যেমন ব্যথানাশক, কিছু অ্যান্টিবায়োটিক, রেটিনয়েড, ডাইউরেটিক, টার্গেটেড থেরাপি বা অ্যান্টি–সাইকোটিক ত্বককে অতি আলোক সংবেদনশীল বা ফটোটক্সিক করে তোলে। কিছু প্রসাধনী বা সুগন্ধি সাবানও আলোক সংবেদনশীলতা বাড়ায়। পারিবারিক ইতিহাস গুরুত্বপূর্ণ।

কী করবেন

প্রথমত, দেখতে হবে মেচতা হওয়ার পেছনে কোনো কারণ আছে কি না। যেমন জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি বা কোনো হরমোন পিল, কোনো ইরিটেটিং প্রসাধনী বা সাবান ইত্যাদি। থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে তা সমাধান করতে হবে। গর্ভকালে মেচতা হলে অনেক সময় সন্তান প্রসবের তিন মাসের মধ্যে সেরে যায়। জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ির জন্য মেচতা হয়ে থাকলে তা বন্ধ করার তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে কমে আসে।

সরাসরি সূর্যালোক থেকে মুখের ত্বককে সুরক্ষা দিতে হবে। সূর্যের আলোতে বের হলে হ্যাট বা ছাতা ব্যবহার করতে হবে, দুই ঘণ্টা পরপর ত্বকে ৩০-৫০ এসপিএফ সানব্লক লাগাতে হবে। সানস্ক্রিনসমৃদ্ধ কসমেটিকস বা মেকআপ ব্যবহার করা ভালো। এলইডি লাইটের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শ থেকেও দূরে থাকতে হবে, স্ক্রিন টাইম কমাতে হবে।

মেচতার চিকিৎসায় চিকিৎসকের পরামর্শে নানা ধরনের ক্রিম ও মুখে খাবার ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এতে কাজ না হলে কেমিক্যাল পিলিং বা অন্যান্য পদ্ধতিও চেষ্টা করা হয়। মেচতার চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি এবং অনেক সময় সুফল পেতে অনেক সময় লাগতে পারে। তাই ধৈর্য ধরে চিকিৎসা করতে হবে।

  • অধ্যাপক মো. আসিফুজ্জামান
  • বিভাগীয় প্রধানচর্মরোগ বিভাগগ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.