একজন নারীকে জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে নানা শারীরিক, হরমোনজনিত ও মানসিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। কৈশোরপ্রাপ্তি, রজঃস্বলা হওয়া, বিবাহিত জীবন, সন্তান ধারণ ও প্রসব, মধ্যবয়সের সংকট, রজঃনিবৃত্তিÑসব মিলিয়ে নারীর গোটা জীবনই ঝড়ঝঞ্জাপূর্ণ।

এতসব ঝড়ঝাপটা পেরিয়ে শেষ অবধি দেখা যায়, নারী সুস্থতা এবং শারীরিক ও মানসিক ফিটনেস অনেকটা হারিয়ে ফেলেছেন। সেজন্য অনেকের ধারণা, পুরুষের তুলনায় নারী দুর্বল, কম বয়সেই বুড়িয়ে যান।

সঠিক যত্ন ও পরিচর্যায় যে কেউ সুস্থতা ও ফিটনেস বজায় রাখতে পারেন। মনে রাখবেন, পুরুষকে নারীর মতো মাসে মাসে রক্ত হারাতে হয় না, সন্তান ধারণ করতে হয় না, সন্তানপ্রসব ও স্তন্যপানও করাতে হয় না। অথচ আমাদের সমাজে পুরুষ বা ছেলেসন্তানই যত্ন পায় বেশি, পরিবারে পুষ্টিকর খাবারটা তাকেই দেয়া হয়। খেলাধুলা-শরীরচর্চা, সঠিক সময়ে খাওয়া-ঘুমÑসব যেন তাদেরই অধিকার। অথচ স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে নারী-পুরুষ উভয়েরই অধিকার সমান হওয়া উচিত।

আসুন জেনে নিই তা কীভাবে চর্চা করবেন:

মেয়েশিশু একটু বড় হওয়ার পর যখন রজঃস্বলা হবে, তখন মাসিকের দিনগুলোয় গড়ে ৬০ মিলিলিটার রক্ত হারাবে। এ কারণে মেয়েদের রক্তশূন্যতার ঝুঁকি থাকে। যথেষ্ট পরিমাণ আয়রনসমৃদ্ধ খাবার, যেমন সবুজ শাকসবজি, বিট, ব্রকলি, মাংস, কলিজা ইত্যাদি খেলে এ ক্ষয় সামলানো সম্ভব;

বিশ্বজুড়ে নারীর হাড়ক্ষয়জনিত সমস্যা বা অস্টিওপোরোসিসের কারণে হাড়ভাঙার ঝুঁকি বেশি। এর কারণ, বোন ম্যাস বা মজবুত হাড় আসলে তৈরি হয় অল্প বয়সেই ১৮ থেকে ২১ বছর বয়সের মধ্যে। তাই অল্প বয়স থেকেই দুধ, দই, ছোট মাছ ইত্যাদি ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। শরীরে রোদ লাগাতে হবে। করতে হবে শরীরচর্চা ও খেলাধুলা;

গর্ভাবস্থায় ও এরপর স্তন্যদানকালে যথেষ্ট পুষ্টিকর ও ক্যালরিসম্মত খাবার না খেলে তার প্রভাব পড়ে স্বাস্থ্যের ওপর। তাই এসব সময়ে নারীর বিশেষ যত্ন প্রয়োজন; বেশিরভাগ নারীই সন্তান ধারণের সময় যে ফিটনেস হারান, তা আর কখনোই ফিরে পান না। গর্ভাবস্থায় ১০ থেকে ১২ কেজি ওজন বৃদ্ধি পাওয়া স্বাভাবিক। পরে আগের ওজন আবার সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়ামের মাধ্যমে ফিরে পাওয়া যায়;

নারীর মানসিক স্বাস্থ্য আমাদের সমাজে খুবই উপেক্ষিত একটি বিষয়। হরমোনের ওঠানামার সঙ্গে মনমেজাজের অনেক কিছুই পরিবর্তিত হতে পারে। আবার নারীর বিষণ্নতা, উদ্বেগজনিত সমস্যা ও অন্যান্য মানসিক রোগ পরিবারে অবহেলা করা হয়। সঠিক চিকিৎসার আওতায় আনা হয় না। এদিকেও নজর দেয়া উচিত;

সুস্থতা ও ফিটনেস বজায় রাখতে যে কাজগুলো করবেন: পুষ্টিকর, সুষম খাদ্যাভ্যাস চর্চা করুন; যত ব্যস্ততাই থাকুক, নিয়মিত হাঁটুন বা ব্যায়াম করুন; পর্যাপ্ত ঘুমান; প্রফুল্ল থাকুন। নিজের পছন্দের কাজে ও নিজেকে সময় দিনক; চল্লিশের পর নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান।

 

ডা. তানজিনা হোসেন

সহযোগী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি ও মেটাবলিজম বিভাগ

গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.