প্রতিবছর উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ডায়াবেটিসের রোগী পবিত্র হজ পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরব যান। হজ পালনের জন্য তাদের কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ: রক্তের শর্করা এ সময় অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়োজন নেই। এটি হাইপোগ্লাইসেমিয়ার ঝুঁকি বাড়াবে। হজ পালনে যাওয়ার আগে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে ওষুধ বা ইনসুলিনের মাত্রা ঠিক করে নেবেন। ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রণ ভালো থাকলে হজযাত্রার সময় ইনসুলিনের ডোজ ১০ থেকে ২০ শতাংশ বা সামান্য কমানোর পরামর্শ দেয়া হয়।
মুখে খাওয়ার সালফোনাইলুরিয়া ওষুধ ইনসুলিনের মতো হাইপোগ্লাইসেমিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। তাই প্রয়োজন মনে করলে চিকিৎসক এর মাত্রা কমাতে পারেন। হাইপোগ্লাইসেমিয়ার ঝুঁকি কমাতে সাধারণ ইনসুলিনের পরিবর্তে অ্যানালগ ইনসুলিন ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া যায়।
খাদ্য ব্যবস্থাপনা: নিয়মিত তিন বেলা খাবারের পাশাপাশি খাবারের মধ্যবর্তী স্ন্যাকসকে ভোলা যাবে না। বাদাম, ফল, মুড়ি ইত্যাদি সঙ্গে রাখা যেতে পারে; দু-একটি খেজুর খাওয়া যাবে রোজ। তাওয়াফের আগ পর্যাপ্ত জটিল শর্করা (যেমন ভাত, রুটি বা ওটস) ও খেজুর খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়; হাইপোগ্লাইসেমিয়ার উপসর্গ বোধ করলে খেজুর বা চকলেট খেতে পারেন।
পায়ের যত্ন: হাঁটার সময় ফাটল রোধে প্রতিদিন দুবার ভালো মানের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন; দৈনিক পা পরীক্ষা করবেন এবং কোনো কাটা বা ইনজুরি হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবেন; পবিত্র স্থানগুলোর দূরত্ব ৫ থেকে ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে হলে না হাঁটা উত্তম; মসজিদের মধ্যে জুতানিষিদ্ধ এলাকায় প্যাডেড মোজা ব্যবহার করা আবশ্যক; পা শুকনা রাখতে অজুর পর তোয়ালে দিয়ে মুছতে হবে; প্রদাহ, ফোসকা ও সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিলে প্রয়োজনে প্রোফাইল্যাকটিক অ্যান্টিবায়োটিক সঙ্গে নিতে পারেন।
পানিশূন্যতা এড়াতে: সর্বদা পানি সঙ্গে রাখতে হবে। কিডনি রোগী পানির পরিমাণ জেনে নেবেন।
অসুস্থ হলে করণীয়: ইনসুলিন নিতে বা ওষুধ খেতে ভুলবেন না; রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ঘনঘন নিরীক্ষণ করতে হবে। যদি মাত্রাগুলো ১৫ মিলিমোল/লিটারের ওপরে ওঠে, তবে প্রস্রাবের কিটোন পরীক্ষা করা দরকার; যেকোনো ধরনের অসুস্থতা, সংক্রমণ, ডায়রিয়া বা বমি হলে পর্যাপ্ত পানি, স্যালাইন, মিষ্টি নয়, এমন পানীয় পান করবেন এবং অল্প পরিমাণে ঘনঘন খাবার খাবেন; অসুস্থতা বেশি হলে চিকিৎসকেরা সাহায্য নিতে হবে।
টিকা নিন: প্রত্যেক ডায়াবেটিসের রোগী হজযাত্রার আগে ইনফ্লুয়েঞ্জা, মেনিনজাইটিসসহ প্রয়োজনীয় সব টিকা নেবেন।
ডা. শাহজাদা সেলিম
সহযোগী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বিএসএমএমইউ