গুলেন ব্যারি সিনড্রোম বা জিবিএস নামটি অনেকের কাছেই অপরিচিত। রোগটির প্রাদুর্ভাব বাংলাদেশে নেহাত কম নয়। যেকোনো বয়সের শিশু-কিশোর বা নারী-পুরুষ এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

জিবিএসের মূল কারণ জীবাণুঘটিত হলেও প্রকৃতপক্ষে জীবাণু প্রতিরোধী ইমিউন সিস্টেমের অস্বাভাবিক আচরণের কারণে এ রোগের উৎপত্তি হয়। ‘ক্যাম্পাইলো ব্যাকটর জেজুনি’ নামের ব্যাকটেরিয়া দিয়ে আক্রান্ত ডায়রিয়ার রোগী বা ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসে আক্রান্ত সর্দিজ্বরের রোগী সাধারণত কিছুদিন পর জিবিএসে আক্রান্ত হয়।

লক্ষণ: ডায়রিয়া বা ইনফ্লুয়েঞ্জা জ্বরের প্রায় দুই সপ্তাহ পর রোগী হঠাৎ প্রথমে দুই পায়ে দুর্বলতা অনুভব করে, যা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এবং ওপরের দিকে মেরুদণ্ড, দুই হাত, বুকের মাংসপেশি, এমনকি মুখের মাংসপেশিতে ছড়িয়ে পড়ে। কখনও কখনও দুর্বলতা এত বেশি হয় যে রোগী হাত-পায়ের আঙুলও সামান্য পরিমাণ নাড়াতে পারে না। বুকের মাংসপেশির দুর্বলতার কারণে শ্বাসকষ্ট হলে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তর করতে হয়। তা না হলে রোগীর মৃত্যুও ঘটতে পারে। এত দুর্বলতা সত্ত্বেও জিবিএসের রোগীর সাধারণ অনুভূতি, স্মৃতিশক্তি ও পায়খানা-প্রস্রাবের কোনো সমস্যা হয় না এবং রোগী অচেতন হয়ে যায় না। তবে এসব রোগীকে সব সময় হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দিতে হয়।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা, চিকিৎসা: নিউরোলজিস্ট বা স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রোগের উপসর্গ, শারীরিক পরীক্ষা, এনসিএস নামের স্নায়ুর পরীক্ষা ও মস্তিষ্কের রস বিশ্লেষণ করে রোগটি নির্ণয় করেন; রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাস, নাড়ির গতি, রক্তচাপ প্রভৃতির প্রতি সার্বক্ষণিক খেয়াল রাখতে হয়। যদি শ্বাসকষ্ট শুরু হয়, তবে তাৎক্ষণিকভাবে রোগীকে আইসিইউতে স্থানান্তর করতে হয়; নিয়মিত হাত-পায়ের ব্যায়াম, পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রোগীকে দ্রুত সেরে উঠতে সহায়তা করে; এ রোগের সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। উপসর্গ শুরুর দুই সপ্তাহের মধ্যে চিকিৎসা দিতে হয়। এরপর ইমিউনো গ্লোবিনের কার্যকারিতা থাকে না; সাধারণত কোনো সংক্রমণ, যেমন ডায়রিয়া বা শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণের দুই বা তিন সপ্তাহ পর পায়ের পেশিতে দুর্বলতা দেখা দিলে বা হাঁটাচলায় সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত নিউরোলজিস্টের শরণাপন্ন হয়ে চিকিৎসা শুরু করতে হবে।

জিবিএসের ক্ষেত্রে সাধারণত প্রায় ৮০ শতাংশ রোগী সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করে। পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ রোগীর কিছু না কিছু শারীরিক দুর্বলতা স্থায়ীভাবে থেকে যায় এবং পাঁচ থেকে ছয় শতাংশ রোগী মারা যায়।

 

ডা. এমএস জহিরুল হক চৌধুরী

অধ্যাপক, ক্লিনিক্যাল নিউরোলজি বিভাগ

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল, ঢাকা

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.