কোলোরেক্টাল ক্যান্সার হলো মলাশয় ও মলদ্বারের ক্যান্সার। যখন মলাশয় ও মলদ্বারের আস্তরণ যুক্ত কোষগুলো নিয়ন্ত্রণের বাইরে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়, তখন কোলোরেক্টাল ক্যান্সার হয়। এই কোষগুলো টিউমার তৈরি করে, যা ক্যান্সার নামে পরিচিত।
এই ক্যান্সার শুরু হতে পারে কলোন বা মলাশয়ের যে কোন স্থানে। বয়স ৪৫ হওয়ার পর থেকে এই ক্যান্সারের জন্য স্ক্রিনিং করা প্রয়োজন। স্ক্রিনিং করলে এই ক্যান্সারের উপস্থিতি আগে থেকে বুঝতে পারা যায়। এতে ডাক্তার এ রোগ নিরাময়ের ব্যবস্থা নিতে পারেন।
কোলোরেক্টাল ক্যান্সার অন্য ক্যান্সার থেকে একটু আলাদা। কারণ স্ক্রিনিং করলে তা প্রতিরোধযোগ্য হয়। আর আগে-ভাগে শনাক্ত করা হলে অনেকটা চিকিৎসাযোগ্য। কোলোরেক্টাল ক্যান্সার বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ৪৫ বছরের বেশি বয়সে ধরা পড়ে। তবে বর্তমানে অনেক কম বয়সে এ ক্যান্সারের লক্ষণ ধরা পড়ছে।
স্ক্রিনিং
ক্যান্সারের লক্ষণ প্রকাশের আগে কোন ক্যান্সার তা খুঁজে বের করার পরীক্ষা-নিরীক্ষাকে স্ক্রিনিং বলা হয়। স্ক্রিনিং হলো ক্যান্সার প্রতিরোধের প্রথম উপায়। এই ক্যান্সার আগে ধরা পড়লে তা চিকিৎসাযোগ্য। কোনো উপসর্গ ছাড়া ১০ -১৫ বছর ধরে কলোরেক্টাল ক্যান্সার থাকতে পারে। স্ক্রিনিং করলে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ৯১%। যাদের বাড়তি ঝুঁকি আছে, তাদের উচিত স্ক্রিনিং করা। বয়স ৪৫ হলেই নারী–পুরুষ উভয়েই স্ক্রিনিং করতে পারেন।
যেভাবে স্ক্রিনিং করা হয়
১. প্রতি ১০ বছরে একবার কোলনোস্কোপি পরীক্ষা করা যায়। ডাক্তার বৃহদান্ত্রে (কলোন আর মলাশয়) পরীক্ষা করেন। অনেক সময় মলের সঙ্গে রক্ত, পেট ব্যথা বা মলত্যাগের অভ্যাসে বদল হয়। এ ক্ষেত্রে মলদ্বারে একটি নমনীয় নল ঢোকানো হয়। আর এর সামনে লাগানো থাকে একটি সিসিডি ক্যামেরা বা ফাইবার অপটিক ক্যামেরা। এতে ভেতরের সবকিছু স্ক্রিনে দেখা যায়। এতে এক মিলিমিটারের মত পলিপ থাকলেও অপসারণ করা যায়।
২. প্রতি তিন বছরে একবার মলের ডিএনএ পরীক্ষা করা যায়। মলের ডিএনএ টেস্ট করতে হলে মলকে একটি বিশেষ পাত্রে নেওয়া হয়। আর সেই মল পাঠানো হয় ল্যাবে। এই টেস্টে মলের নমুনায় দেখা হয় কোষের মধ্যে ডিএনএ-তে পরিবর্তন হচ্ছে কিনা। কিছু ডিএনএ পরিবর্তন নির্দেশ করে মলে রক্ত লুকিয়ে আছে কিনা।
৩. এফআইটি প্রতি বছরে একবার করা যায়। এটি হলো স্ক্রিনিং টেস্ট। এতে মলে লুকানো রক্তের উপস্থিতি জানা যায়। নমুনা সংগ্রহ করে পাঠাতে হয় ল্যাবে।
লেখক:
অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী
সাবেক অধ্যক্ষ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল