কোলন ক্যানসার বা বৃহদন্ত্রের ক্যানসারের কিছু ঝুঁকি রয়েছে। এগুলো হচ্ছে ধূমপান, কম শাকসবজি ও ফলমূল গ্রহণ, মদ্যপান, ওজন বৃদ্ধি, কায়িক পরিশ্রম না করা ইত্যাদি। সুনির্দিষ্ট কিছু ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বয়স ৪০ বা তার বেশি, নিজের অথবা পরিবারের সদস্যদের কোলন ক্যানসার ও কোলনিক পলিপে আক্রান্ত হওয়ার অতীত ইতিহাস, বংশানুক্রমিকভাবে কোলনিক পলিপে আক্রান্ত হওয়া, ইনফ্ল্যামেটরি বাওয়েল ডিজিজ; যেমন ক্রনস বা আলসারেটিভ কোলাইটিস।

প্রাথমিকভাবে কোলন ক্যানসার শনাক্ত করা কঠিন। কারণ, শুরুতে তেমন উপসর্গ থাকে না। কোলন বা মলাশয়ের কোন স্থানে ক্যানসার রয়েছে, তার ওপর ভিত্তি করে উপসর্গের ভিন্নতা দেখা যায়; যেমন পায়খানার সঙ্গে টাটকা রক্ত যাওয়া বা কালো পায়খানা হওয়া, মলত্যাগের অভ্যাসে পরিবর্তন (কখনো ডায়রিয়া, কখনো কোষ্ঠকাঠিন্য), রক্তশূন্যতা, খাবারে অরুচি, ওজন কমে যাওয়া, পেটব্যথা, পেটে চাকা ইত্যাদি।

এসব সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসক কোলনের নানা অংশ পরীক্ষার জন্য কোলনোস্কোপি করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এ পরীক্ষায় কোনো পলিপ বা অস্বাভাবিক টিস্যু চোখে পড়লে তা কেটে বের করা হয় এবং সেটির বায়োপসি পরীক্ষাও করা হয়। পলিপ থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সেগুলো থেকে ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা থাকে না। তবে কিছু কিছু পলিপে ক্যানসারের প্রবণতা থাকে। সেগুলো বায়োপসিতে ধরা পড়ে।

কোলনোস্কোপি করতে অনেকেই ভয় পান। কিন্তু এ পরীক্ষা কষ্টদায়ক নয়। কারণ, পরীক্ষার সময় রোগীকে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়। তবে কোলনের ভেতরে যাতে বিষ্ঠা বা জলীয় পদার্থ না থাকে, সে জন্য কোলনোস্কোপি পরীক্ষার ২৪ ঘণ্টা আগে থেকে চিকিৎসকেরা জোলাপ এবং অনেক স্বচ্ছ জলীয় দ্রব্য (জল, জিঞ্জারেল ইত্যাদি) খেতে বলেন।

লাল রঙের কোনো জলীয় পদার্থ; যেমন টমেটোর জুস বা কোলা জাতীয় দ্রব্য পানে বারণ করা হয়, যাতে কোলন পরীক্ষার সময় সেগুলোকে রক্ত ভেবে ভুল না হয়। কোলনোস্কোপি হওয়ার পর এক ঘণ্টার মধ্যেই রোগীর ঘোর কেটে যায়। পরীক্ষার পর প্রথমবার ওয়াশরুমে গেলে একটু রক্ত দেখতে পাওয়া অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু পরেও রক্ত পড়তে থাকলে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা প্রয়োজন।

কোলন ক্যানসার প্রতিরোধে কোলনোস্কোপির নিয়মিত ব্যবহার পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে প্রচলিত। ক্যানসারপ্রবণ পলিপ কেটে বাদ দেওয়া ও সেগুলো আবার হচ্ছে কি না, তা নিয়মিত পরীক্ষা করে দেখা ক্যানসার প্রতিরোধ চিকিৎসার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ঝুঁকি থাকলে রুটিন পরীক্ষা হিসেবেও এই পরীক্ষা করা হয়। কোলনোস্কোপি পরীক্ষা করা হলে দ্রুত ক্যানসার শনাক্ত করা সম্ভব এবং প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা করলে রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন।

 

অধ্যাপক ডা. মো. সেতাবুর রহমান

সার্জিক্যাল অনকোলজি বিভাগ, জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা।

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.