ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে কলোরেক্টাল বা বৃহদন্ত্রের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা বিশ্বে তৃতীয় সর্বোচ্চ। আবার ক্যানসারজনিত মৃত্যুর ঘটনার ক্ষেত্রে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কারণ। ২০২০ সালে প্রায় ২০ লাখ নতুন বৃহদন্ত্রের ক্যানসার রোগী শনাক্ত হয়েছিলেন এবং প্রায় ৯ দশমিক ৩ লাখ লোক এতে মৃত্যুবরণ করেন।

বৃহদন্ত্রের কোষ যখন অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে থাকে, তখন এ রোগের সূত্রপাত হয়। কোষসমূহ বৃদ্ধির ফলে বৃহদন্ত্রের ভেতরের দেয়ালে ছোট ছোট পলিপ তৈরি হয়; যা প্রাথমিকভাবে ক্যানসার নয়, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা ক্যানসারে পরিণত হতে পারে। রোগটি পাশ্চাত্যের দেশে বেশি দেখা গেলেও বর্তমানে আমাদের জীবনাচরণের পরিবর্তনে এ অঞ্চলেও এটি উত্তরোত্তর বাড়ছে।

কলোরেক্টাল ক্যানসারের ঝুঁকি

 বয়ঃবৃদ্ধি সঙ্গে সঙ্গে রোগটির প্রাদুর্ভাব বাড়ে ও পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সেই প্রধানত দেখা দেয়।

■ বৃহদন্ত্রে পলিপ থাকলে তা ৫-১০ বছরের মধ্যে ক্যানসারে পরিণত হতে পারে।

■ বৃহদন্ত্র ক্যানসারের পারিবারিক ইতিহাস।

■ ঝুঁকিপূর্ণ জীবনাচরণ, যেমন: অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস (খাদ্যে অধিক পরিমাণ প্রক্রিয়াজাত মাংস, ফাস্টফুড, সবজি ও ফলমূলহীন খাবার, দেহের ওজনাধিক্য, কায়িক শ্রমহীন আরামদায়ক জীবন, ধূমপান ও মদ্যপান।

লক্ষণ

রোগটি প্রায়ই লক্ষণহীন থাকে। তবে আকস্মিক মলত্যাগের অভ্যাসে পরিবর্তন, যেমন: কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া বা অনিয়মিত মলত্যাগ, মলে রক্ত বা কালো পায়খানা, রক্তশূন্যতা, অতিদুর্বলতা, পেটে ব্যথা বা পেট ফোলা, ওজন কমে যাওয়া ইত্যাদি সতর্কসংকেত।

প্রতিরোধ

■ কলোরেক্টাল ক্যানসার স্ক্রিনিং: স্ক্রিনিং হলো এমন কিছু পরীক্ষা; যা দিয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে বা ক্যানসারে পরিণত হওয়ার আগেই রোগটির সম্ভাবনা খুঁজে পাওয়া ও চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীকে সম্পূর্ণ নিরাময় করা সম্ভব।

■ আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটি সব ব্যক্তিকে ৪৫ বছর বয়সেই স্ক্রিনিং টেস্ট করার পরামর্শ দিয়ে থাকে। স্ক্রিনিং টেস্টের মধ্যে আছে: ক. মল পরীক্ষা। এটি মলে লুক্কায়িত রক্তের উপস্থিতি নির্ণয় করে ও বৃহদন্ত্রে পলিপ বা ক্যানসারের উপস্থিতি নির্দেশ করে; খ. কোলোনস্কপি পরীক্ষা। এর মাধ্যমে বৃহদন্ত্রে পলিপ বা ক্যানসারের উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়া যায়। পলিপ মানেই ক্যানসার নয়, কিন্তু সময়ের বিবর্তনে এটি ক্যানসারে পরিণত হতে পারে। তাই কোলোনস্কপি দিয়ে পলিপ অপসারণের মাধ্যমে ক্যানসারের ঝুঁকি প্রতিরোধ করা যায়।

■ খাবারে প্রচুর শাকসবজি, ফলমূল ও পূর্ণ অন্ন বা শস্যদানার উপস্থিতি এ ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। অবশ্যই লাল মাংস ও প্রক্রিয়াজাত খাবার সীমিত করতে হবে।

■ উচ্চতা ও বয়স অনুযায়ী শরীরের ওজন ঠিক রাখা।

■ধূমপান ও মদ্যপান বর্জন।

 

অধ্যাপক ডা. বিমল চন্দ্র শীল

মেডিসিনপরিপাকতন্ত্র ও লিভারবিশেষজ্ঞসিনিয়র কনসালট্যান্ট (গ্যাস্ট্রোএন্টারলজি)ল্যাবএইড হাসপাতালধানমন্ডিঢাকা

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.