ইদানীং প্রায় সব শিশুর দূরে দেখার জন্য চশমা লাগে। ঘরে ঘরে খুব ছোট, এমনকি চার–পাঁচ বছরের শিশুদের চোখেও চশমা। এতে অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে, কেন এ পরিস্থিতি। চিকিৎসাশাস্ত্রের ভাষায় এটিকে বলা হয় মায়োপিয়া বা ক্ষীণদৃষ্টি। কাছে সবকিছু ভালো দেখা যায়, কিন্তু দূরে দেখা যায় না।

কারণ

  • পরিবেশগত
  • জন্মগত বা জেনেটিক
  • অজ্ঞাত কারণ (ইডিওপ্যাথিক)

আমাদের আধুনিক জীবনযাপনে এসেছে আমূল পরিবর্তন। বড়রা বাইরে থাকেন জীবিকার প্রয়োজনে আর শিশুরা থাকে ঘরে, স্কুলে বা কোচিংয়ে।
তাদের হাতে দেওয়া হয় স্মার্টফোন, কম্পিউটার ইত্যাদি; যা চোখের মারাত্মক ক্ষতি করে। চার দেয়ালে আবদ্ধ থেকে তাদের দৃষ্টিশক্তিও ওই চার দেয়ালেই আবদ্ধ থাকে।

কিন্তু শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ তথা দৃষ্টিশক্তির উন্নতিতে অবশ্যই একটা নির্দিষ্ট সময় খেলার মাঠ বা খোলা আকাশের নিচে অন্য কোথাও থাকতে হবে তাদের। সেখানে দূরদিগন্ত আর আকাশ দেখে তাদের দূরের দৃষ্টি তৈরি হবে।

গ্রামের শিশুদের কিন্তু এমন সমস্যা থাকে না। এ জন্য তাদের তেমন একটা চশমাও লাগে না। এ ছাড়া শহরের শিশুরা এখন সবুজ শাকসবজি খেতে চায় না। তারা ফাস্ট ফুডে অভ্যস্ত, যা সুষম খাদ্য উপাদান সরবরাহ করতে ব্যর্থ। ছোট–বড় মাছ, দুধ, মাংসও তারা খেতে চায় না। এসব খাবারে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ থাকে, যা চোখের স্বাস্থ্য ঠিক রাখা ও দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন।

মায়োপিয়ার লক্ষণ

  • শিশুরা দূরে ভালো দেখতে পায় না।
  • ঘরের ভেতরে বা চার দেয়ালের মধ্যে ভালোই দেখে।
  • দূরে রাখা ব্ল্যাকবোর্ড দেখতে সমস্যা হয়।
  • চোখ ট্যারা বা স্কুয়িন্ট হতে পারে।

প্রতিকার

সব রোগের জন্যই চিকিৎসার চেয়ে প্রতিকার বা প্রিভেনশন উত্তম। যেসব কারণে সমস্যা হচ্ছে, তা থেকে মুক্ত হতে পারলেই শিশুদের চশমা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।

  • শিশুরা যতক্ষণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে থাকবে, তার তিন ভাগের এক ভাগ সময় ক্লাসরুমের বাইরে, যেমন খেলার মাঠে সময় কাটাবে।
  • সাঁতার শেখাতে হবে।
  • বাইরে বেড়াতে নিয়ে যেতে হবে।

চিকিৎসা

  • নিয়মিত চক্ষু পরীক্ষা করাতে হবে।
  • শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দেওয়ার আগে অবশ্যই চোখের চিকিৎসক দেখাতে হবে।

চশমা না পরলে ক্ষতি

  • চিকিৎসা না হলে বা চশমা ব্যবহার না করলে শিশুরা দূরের জিনিস দেখবে না, পড়া বুঝতে পারবে না।
  • আইকিউ কম হবে। সব ব্যাপারে পিছিয়ে পড়বে।
  • চশমা ছাড়াও মায়োপিয়া রোগীর অস্ত্রোপচার করা লাগতে পারে।

যারা চশমা নিতে চায় না ও বয়স ২১ বা এর বেশি এবং দৃষ্টিশক্তি বাড়ে না, তাদের ল্যাসিক করা যায়।

  • ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ
  • সহকারী অধ্যাপক (ফ্যাকো ও গ্লুকোমা সার্জন), নির্বাহী পরিচালক ও পরামর্শক, বাংলাদেশ আই হাসপাতাল, মিরপুর ২, ঢাকা

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.