‘দেশীয় ছোট মাছ ভালো খাবার’—এই বাক্যটি আমাদের সকলের কাছে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য। এর মধ্যে দিয়ে আমরা ছোট মাছের পুষ্টিগত উপাদান সম্পর্কে ধারণা পাই। যদিও আমাদের বর্তমান নাগরিক জীবনের খাদ্যতালিকায় প্রায়ই ছোট মাছ উপেক্ষিত। এ দেশের নদ-নদী, পুকুর, খাল, বিল, হাওরে পাওয়া যায় অনেক ধরনের মাছ। পুষ্টিগুণে ভরপুর এসব মাছের কথা আমরা অনেকেই জানি না। বিশেষ করে ছোট মাছ শরীরের জন্য কতটা জরুরি। আপনার খাদ্যতালিকায় যদি ছোট মাছ থাকে, তাহলে আপনি প্রোটিনের পাশাপাশি ভিটামিন, মিনারেলের চাহিদা পূরণ করতে পারবেন।
জেনে নেওয়া যাক ছোট মাছের পুষ্টিগুণের কথা:
১. ছোট মাছ ওমেগা–৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন, খনিজসহ প্রয়োজনীয় পুষ্টির একটি পাওয়ার হাউস, যা সামগ্রিক স্বাস্থ্য ও পুষ্টির ঘাটতি মেটাতে অনেক বেশি অবদান রাখে।
২. ওমেগা–৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ ছোট মাছ, যেমন: সার্ডিন এবং অ্যাঙ্কোভি ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের চমৎকার উৎস। এই অত্যাবশ্যকীয় চর্বি হার্টের স্বাস্থ্য, মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ও শরীরে প্রদাহ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৪. পুষ্টিতে ভরা ছোট মাছ প্রায়শই পুরোটা খাওয়া হয়। ছোট মাছের হাড় ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস সমৃদ্ধ। যা হাড়ের স্বাস্থ্য এবং শক্তিশালী দাঁত গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এ মাছে থাকা প্রচুর ক্যালসিয়াম হাড়ের ঘনত্ব ঠিক রাখে।
৫. বড় মাছের তুলনায় ছোট মাছে সাধারণত পারদ এবং অন্যান্য দূষিত পদার্থের মাত্রা কম থাকে। এতে শরীর বিভিন্ন ক্ষতিকর দূষিত পদার্থ থেকে দূরে থাকে। বিশেষ করে গর্ভবতীদের এবং ছোট শিশুদের জন্য ছোট মাছ অনেক বেশি উপকারী।
৬. ছোট মাছ প্রায়ই বড় মাছের প্রজাতির চেয়ে বেশি টেকসই এবং পরিবেশবান্ধব। তাদের সাধারণত সংক্ষিপ্ত জীবনচক্র পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
৭. স্থানীয় অর্থনীতিতেও অবদান রাখে ছোট মাছ। ক্ষেত্রবিশেষে ছোট মাছ জেলে ও তাদের সম্প্রদায়ের জীবিকা নির্বাহে সহায়তা করে।
৮. পরিবেশগতভাবে দেশীয় ছোট মাছ টেকসই মাছ ধরার অনুশীলন এবং সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণকে উৎসাহিত করে। স্থানীয় বাস্তুতন্ত্রে এই প্রজাতির গুরুত্ব অত্যধিক।
লেখক:
মাসুমা চৌধুরী
পুষ্টিবিদ ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ