বয়স্ক মানুষের আকস্মিক মৃত্যু ও শয্যাশায়ী হয়ে পড়ার অন্যতম কারণ স্ট্রোক। স্ট্রোককে অনেকেই হƒদরোগ ভেবে ভুল করেন। স্ট্রোক আসলে মস্তিষ্কের একটি রোগ। কোনো কারণে মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে রক্তক্ষরণ হলে বা মস্তিষ্কের কোষে রক্ত চলাচল কমে গেলে স্ট্রোক হয়। ফলে তাৎক্ষণিক মৃত্যু হতে পারে, অথবা অনেকেই পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে বাকি জীবনটা অসহনীয় দুর্দশার মধ্যে পড়েন। স্ট্রোক মূলত দুই ধরনের। হঠাৎ রক্তনালি বন্ধ হয়ে মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল ব্যাহত হলে ওই নির্দিষ্ট এলাকার নিউরনগুলো নষ্ট হয়ে যায়। একে বলে ইস্কেমিক স্ট্রোক। আবার কখনও রক্তনালি ছিঁড়ে বা ফেটে রক্তক্ষরণ হয়, যাকে বলে হেমোরেজিক স্ট্রোক। স্ট্রোক হলে অজ্ঞান হওয়া বা চেতনা কমে যাওয়া, কোনো একদিক অবশ হওয়া, কথা জড়ানো, অসংলগ্ন আচরণ, বমি, মাথা ঘোরা, ভারসাম্য নষ্ট হওয়া, মুখ বেঁকে যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়।

মিনি বা মাইল্ড স্ট্রোক কী: অনেক সময় মস্তিষ্কের কোনো রক্তনালি অল্প সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে আবার নিজে নিজেই সচল হয়। এ ক্ষেত্রে কিছু লক্ষণ প্রকাশিত হয়ে সাধারণত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রোগী স্বাভাবিক হয়ে যায়। একে ট্রানজিয়েন্ট ইস্কেমিক অ্যাটাক বা মিনি স্ট্রোক বলে। এটি একটি লাল সংকেত। কারণ, এর মানে হলো আপনি ভবিষ্যতে বড় ধরনের স্ট্রোকের ঝুঁকিতে আছেন।

কারা আছেন ঝুঁকিতে: বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নারী-পুরুষ উভয়েরই স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। উচ্চ রক্তচাপ, এটি দুই ধরনের স্ট্রোকেরই ঝুঁকি বাড়ায়। ডায়াবেটিস, রক্তে ক্ষতিকর চর্বির আধিক্য, রক্তনালির রোগ, হার্টের কোনো রোগ (বিশেষ করে হƒৎস্পন্দনজনিত সমস্যা), মাইল্ড স্ট্রোকের ইতিহাস, ধূমপানের অভ্যাস, স্থূলতা, বিভিন্ন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।

কীভাবে ঝুঁকি কমাবেন: স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস রপ্ত করুন। নিয়মিত রক্তচাপ মাপুন, উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তা নিয়ন্ত্রণ করুন। রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখুন। ক্ষতিকর চর্বি কমাতে প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ধূমপান ও অ্যালকোহল বর্জন করুন। আদর্শ ওজন বজায় রাখুন। হার্টের রোগ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। লবণ পরিমিত ব্যবহার করুন। নিয়মিত হাঁটুন ও সচল থাকুন।

 

অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.