চারদিকে বায়ুদূষণ ক্রমবর্ধমান। তার প্রভাব সদ্যোজাত থেকে প্রাপ্তবয়স্ক প্রত্যেকের ওপর পড়ছে। বায়ুদূষণের ফলে সদ্যোজাত বা এক বছরের কম বয়সী শিশুর নিঃশ্বাস নিতে অসুবিধা বা হার্টের সমস্যা হতে পারে। এমনকি দূষণের কারণে মায়ের গর্ভে থাকাকালে সন্তানের জš§গত সমস্যা তৈরি হতে পারে। ১৫ থেকে ৬০ বছর বয়সের মধ্যে যাদের লাং ডিজিজ বা শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা আছে, তাদের ক্ষেত্রেও বারবার নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে। ৬৫ বছরের ওপরে যাদের ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজের প্রবণতা অনেক বেশি, তাদের ক্ষেত্রে ইনফেকশন, নিউমোনিয়া, হাঁপানি বেড়ে যেতে পারে। হাঁপানি, সিওপিডি বা শ্বাসযন্ত্রের অন্য যে কোনো অসুখের সঙ্গে বায়ুদূষণ সরাসরি যুক্ত।

অসুখের প্রতিকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো দূষণ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা। গাড়ির ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে হবে। আরেকটি জরুরি বিষয় হলো মাস্ক ব্যবহার করা। পার্শিয়াল ফিল্টারযুক্ত মাস্ক পরা সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্কের তুলনায় বেশি কার্যকর।

খুব ভোরে বা সন্ধ্যাবেলা হাঁটবেন না। এ সময়ে ধূলিকণা বা বাতাসের দূষণ সৃষ্টিকারী উপাদানগুলো অনেকটা নিচের দিকে থাকে। ফলে খানিকটা রোদ উঠলে হাঁটতে বের হবেন। ফ্রিজের ঠাণ্ডা খাবার এড়িয়ে চলুন। শীতে গলা-কান ঢেকে রাখা জরুরি। এতে ফুসফুস বা শ্বাসযন্ত্রের সমস্যার প্রকোপ অনেকটা কমানো যেতে পারে। অনেকের অল্প ধুলো ঢুকলেই হাঁচি-কাশি শুরু হয়ে যায়। ডাস্ট অ্যালার্জি থেকে এমনটা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ডাক্তারের কাছে গিয়ে অ্যালার্জির পরিমাণ জেনে নেয়া জরুরি।

হাঁপানি বা সিওপিডির আশঙ্কা আছে কিনা, সেটাও জেনে নেবেন। যারা আউটডোরে ধুলাবালির পরিবেশে কাজ করেন, তারা অবশ্যই মাস্ক পরবেন। হাঁপানির ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে শুকনো কাশি, নিঃশ্বাসে কষ্ট আর বুকের মধ্যে সাঁই সাঁই শব্দ হতে পারে। হাঁপানির একটি বৈশিষ্ট্য হলো, এ অসুখ মাঝেমধ্যে বাড়ে, আবার মাঝেমধ্যে এতটাই নিয়ন্ত্রিত থাকে যে রোগী ধরে নেন তিনি সুস্থ হয়ে গিয়েছেন।

সিওপিডি সাধারণত ৪০ বা ৫০ বছরের বেশি বয়সীদের হতে পারে। সিঁড়ি দিয়ে উঠলে, বেশি হাঁটাচলা করলে হাঁপিয়ে যান রোগী। কাশি থাকে। মাঝেমধ্যে কাশির সঙ্গে কফও থাকে। এছাড়া এই অসুখের ক্ষেত্রে হাত ফুলে যেতে পারে। চিত হয়ে শুয়ে থাকলে শ্বাসকষ্টও দেখা দিতে পারে। হাঁপানির মূল চিকিৎসা ইনহেলেশন-থেরাপি। এর সঙ্গে প্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক, ওরাল স্টেরয়েড, অ্যান্টিঅ্যালার্জিক ওষুধের দরকার হতে পারে।

 

ডা. নাফিসা আবেদীন

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.