প্রতিবছর ২০ অক্টোবর বিশ্ব অস্টিওপরোসিস দিবস পালিত হয়। পৃথিবীর সকল প্রায় সকল দেশে একই প্রতিপদ্য বিষয় নিয়ে বছরান্তে অষ্টিওপরোসিস দিবসটি পালন করে ।
অস্টিওপরোসিস বা হাড়ক্ষয় বলতে শরীরের হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়াকে বুঝায়। অস্টিওপরোসিটিক হাড় অনেকটা মৌচাকের মতো হয়ে যায়। এতে হাড় ঝাঁঝরা বা ফুলকো হয়ে যায় বা যাতে অতি দ্রুত ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। মারাত্মক হাড়ক্ষয়ে অস্থি এতটাই ভঙ্গুর হয়ে যায় যে, হাঁচি বা কাশি দিলেও তা ভেঙে যেতে পারে।
পঞ্চাশ বছর পর থেকে শরীরের হাড় ক্ষয় বা এর লক্ষ্মণ সমূহ প্রতিভাত হতে থাকে। এর শুরু কিন্তু অনেক আগে থেকেই হতে থাকে। একজন পুরুষ বা মহিলার দেহের হাড় সাধারণত ২৮ বছর বয়স পর্যন্ত ঘনত্বে বাড়ে; ৩৪ বছর পর্যন্ত তা বজায় থাকে। এরপর থেকে হাড় ক্ষয় পেতে থাকে।
যাদের ক্ষেত্রে হাড় ক্ষয়ের ঝুঁকি বেশি, তাদের দ্রুত হাড়ের ঘনত্ব কমতে থাকে। মহিলাদের মাসিক পরবর্তী সময়ে (পোস্ট মনোপসাল) হাড় ক্ষয়ের গতি খুব বেগবান হয়। এ ছাড়াও অনেক কারণ বা ঝুঁকি হাড় ক্ষয়ের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৩০% রজঃনিবৃত মহিলা হাড়ক্ষয়ে আক্রান্ত। ইউরোপের চিত্রও অনেকটা তেমনই। অন্ততপক্ষে ৪০% মহিলা ও ১৫%-৩০% পুরুষ তাদের জীবদ্দশার বাকি সময়ে স্বল্প আঘাতে হাড় ভাঙার শিকার হবেন (যা হাড় ক্ষয়ের কারণেই হয়ে থাকবে)। আর যাদের একবার হাড় ভাঙার ঘটনা ঘটে, তাদের পরবর্তী হাড় ভাঙার ঝুঁকি অনেকগুণ বেড়ে যায়। একবার পাঁজরের হাড় ভাঙলে কোমরের হাড় ভাঙার সম্ভাবনা ২-৩ গুণ বৃদ্ধি পায় এবং উরুর হাড় ভাঙার সম্ভাবনা ১-৪% বাড়ে। তবে বাংলাদেশের মহিলা-পুরুষদের মাঝে হাড় ক্ষয়ের হার ও ঝুঁকির উপস্থিতির তথ্য অপ্রতুল।
হাড়ক্ষয়ের ঝুঁকি সমূহ:
অসংশোধনযোগ্য ঝুঁকি:
১। বয়োবৃদ্ধি
২। স্ত্রী লিঙ্গ
৩। জিনগত ত্রুটি
৪। অপারেশনের কারণে ডিম্বাশয় না থাকা
৫। হায়পোগোনাডিজম (পুরুষ ও মহিলার)
৬। অতি খর্বাকৃতি
সংশোধনযোগ্য ঝুঁকি:
১। ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি
২। ধূমপান
৩। অপুষ্টি [ক্যালসিয়াম, জিঙ্ক, ভিটামিন এ, কে ইত্যাদি]
৪। ক্ষীণকায় দৈহিক আকার
৫। আমিষনির্ভর খাদ্যাভ্যাস
৬। বেশি বয়সে অতিরিক্ত চা/কফি/ চকোলেট গ্রহণের অভ্যাস।
৭। খাদ্যে বা বাতাসে ভারী ধাতু
৮। কোমল পানীয় ও মদ্যপান
১। দীর্ঘ দিনের শারীরিক অচলাবস্থা
২। স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ সেবন [বাংলাদেশের রোগীদের মাঝে এটি খুব ব্যাপকভাবে বিরাজমান; বিশেষ করে অস্বীকৃত/ আত্মস্বীকৃতদের দ্বারা নির্দেশিত হয়ে যারা ওষুধ সেবন করছেন, প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতির (কবিরাজি, আয়ুর্বেদী, হোমিওপ্যাথি, ইউনানি ইত্যাদি) মাঝে স্টেরয়েডের মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি]
৩। অন্যান্য হরমোনজনিত রোগ: হাইপার থাইরয়েডইজম, হাইপারপ্যারাথাইরয়েডইজম কুসিং সিনড্রম, ডায়াবেটিস, এ্যাক্রমেগালি, অ্যাডিসন রোগ, রিউমাটয়েড আরথ্রাইটিস, এসএলই, কিডনি অকার্যকারিতা ইত্যাদি।
উপসর্গ: প্রথমত হাড়ক্ষয়ে কোনো শারীরিক লক্ষ্মণ গোচরীভূত নাও হতে পারে। তবে, কোমরে বা পিঠে বা অন্য কোথাও ব্যথা, বিশেষ করে তা ব্যথা নাশকে কমছে না, এমন চরিত্রের। কারও কারও দৈহিক উচ্চতা কমে থাকবে, কুঁজো হয়ে যাওয়া বা সামনে ঝুঁকে থাকা। তবে সংগোপনে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে মারাত্মক বিষয় হলো, মেরদ-ে ফাটল বা চিড় ধরা এবং ঠুনকো আঘাতেই হাড় ভাঙা।
শনাক্তকরণ:
অনেক রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষার দরকার হতে পারে: কিছু ঘনত্ব পরিমাপের জন্য, কিছু আবার ঝুঁকিসমূহ চিহ্নিত করার জন্য। বি এম ডি পরীক্ষাটি এ কাজে সবচেয়ে ভালো।
চিকিৎসা: এ রোগে প্রধান ও প্রথম পদক্ষেপ হবে ঝুঁকি শনাক্তকরণ, সম্ভব হলে তা রহিত করা।
এরপর বেশ ওষুধ পাওয়া যায়, সেগুলোর কোনো একটি নির্দিষ্ট রোগিণী বা রোগীর জন্য প্রযোজ্য হতে পারে। যেহেতু, হাড়ক্ষয় (অস্টিওপরোসিস) একবার হলে আর পেছন দিকে সম্ভাবনা ক্ষীণ, তাই একে আগে ভাগেই রোধ করার জাতীয় ও প্রাতিষ্ঠানিক কর্মসূচী নিতে হবে। এর অংশ হিসেবে কারা কতটুকু ঝুঁকিতে আছেন বা কারা ইতোমধ্যেই হাড়ক্ষয়ে ভুগছেন, তা নির্ধারণ করতে হবে এবং উপযোগী চিকিৎসা নির্বাচন ও প্রয়োগ করতে হবে। আর হাড়ক্ষয় রোধে নি¤œলিখিত পদক্ষেপগুলো
বিবেচনা করা যেতে পারে:
* নিয়মিত ব্যায়াম
* স্টেরয়েডসহ ক্ষতিকারক ওষুধ সেবন থেকে বিরত থাকা
* পুষ্টি নিশ্চিতকরণ
* ধূমপান ত্যাগ
* প্রয়োজনে পরিমিত ক্যালসিয়াম সেবন?
লেখক :
ডা. শাহজাদা সেলিম
সহযোগী অধ্যাপক
এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়