কোনো কারণে অক্সিজেন সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হলে মস্তিষ্কের কোষগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ কারণে শরীরের বিভিন্ন অংশে দেখা দিতে পারে বিশেষ পরিবর্তন। অনেক সময় শরীরের কোনো একটি অংশ প্যারালাইসিস বা অবশ হয়ে যায়। কখনো কথা জড়িয়ে যায়, ভারসাম্য নষ্ট হয়। লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ামাত্র রোগীকে জরুরিভাবে হাসপাতালে নিতে হবে।

ধরন

  • ইসকেমিক স্ট্রোক: এ ধরনের স্ট্রোকে মস্তিষ্কে রক্তের চলাচল যেকোনো কারণে বাধাগ্রস্ত হয়ে থাকে।
  • হেমোরেজিক স্ট্রোক: এ ধরনের স্ট্রোকে রক্তনালি ফেটে মস্তিষ্কে রক্ত ছড়িয়ে পড়ে বা রক্তনালিতে রক্ত জমাট বেঁধে মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত হয়।

সাধারণত স্ট্রোকের রোগীদের ৮৫ শতাংশ ইসকেমিক স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। অন্যরা আক্রান্ত হন হেমোরেজিক স্ট্রোকে। এ ছাড়া নারীদের তুলনায় পুরুষেরা স্ট্রোকে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন।

কারণ

  • উচ্চ রক্তচাপ;
  • অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা;
  • ট্রমা বা আঘাত;
  • অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস;
  • রক্তে উচ্চমাত্রায় কোলেস্টেরলের উপস্থিতি;
  • অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস;
  • অতিরিক্ত নিকোটিন বা অ্যালকোহল সেবন।

লক্ষণ

  • শরীরের যেকোনো অংশ বা এক পাশ অবশ হওয়া।
  • কথায় জড়তা ভাব বা কথা বলা বন্ধ হয়ে যাওয়া।
  • চোখে ঝাপসা দেখা বা কোনো জিনিস দুটি দেখা।
  • হঠাৎ প্রচণ্ড মাথাব্যথা বা বমি বমি ভাব।
  • শরীরের ভারসাম্য ধরে রাখতে অসামর্থ্য হওয়া।
  • অনেক সময় খিঁচুনি বা চেতনা হারানোর অবস্থা।
  • ঘুম ঘুম ভাব।

চিকিৎসা

  • স্ট্রোকের লক্ষণ প্রকাশ বা আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগীকে দ্রুততম সময়ে হাসপাতালে নিতে বা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
  • লক্ষণ প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে মেডিকেল সাপোর্ট নিশ্চিত করতে হবে। যদি সম্ভব হয় আক্রান্ত হওয়ার চার ঘণ্টার মধ্যে স্ট্রোক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে পারলে আধুনিক চিকিৎসায় ৯৮ শতাংশ রোগী খুব দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেন।
  • যদি ওই সময়ের মধ্যে রোগীকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন করা না যায়, তবে পরবর্তী সময় দুটি চিকিৎসার ওপর গুরুত্ব দিতে হয়। এক, পরবর্তী স্ট্রোক প্রতিরোধে ওষুধ এবং দুই, ফিজিওথেরাপি। এই দুই চিকিৎসা একে অপরের পরিপূরক বা সমান গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, রোগীকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে টিমওয়ার্ক চিকিৎসা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পারিবারিক সাপোর্ট বা নার্সিং কেয়ার ওই সময় খুব গুরুত্ব বহন করে। রোগীকে একজন নিউরোলজি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে কিছু ওষুধ সেবন করতে হয়। সঙ্গে একজন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থেকে নিয়মিত ফিজিওথেরাপি নিশ্চিত করতে হয়, যাতে অল্প কিছুদিনের মধ্যে রোগী স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সক্ষম হয়।

 

মো. সাইদুর রহমান

চিফ কনসালট্যান্ট ও চেয়ারম্যান, রি-অ্যাকটিভ ফিজিওথেরাপি সেন্টার, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ অ্যাভিনিউ, তেজগাঁও, ঢাকা

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.