প্রায় এক মাস বন্ধ থাকার পর খুলছে স্কুল। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে প্রিয়জন হারানোর বেদনা আছে কারও কারও। তরুণদের সঙ্গে মাঠে ছিল কিছু স্কুলশিশুও। একটা অস্থির সময়ের পর নতুন করে স্কুলে যেতে কারও মধ্যে তৈরি হতে পারে জড়তা; ভয় আর অনিশ্চয়তার রেশও তো কাটেনি। তাই এসব শিশুর হতে পারে ঘুমের সমস্যা, খিটখিটে মেজাজ, নিজেকে গুটিয়ে রাখার প্রবণতা, শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা আর মনোযোগহীনতা। দুঃসহ স্মৃতির প্রভাবে ভবিষ্যতে কারও কারও দেখা দিতে পারে পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার (পিটিএসডি)।

এ সময় স্কুলশিক্ষার্থীদের মনের যত্ন নেওয়া খুব জরুরি। শিক্ষক ও অভিভাবকেরা এ জন্য যা করতে পারেন:

● কোনো শিক্ষার্থী যদি কাছের স্বজন বা সহপাঠী হারিয়ে থাকে, তবে তাকে শোক প্রকাশের সুযোগ দিন এবং স্কুলে বিষয়টিকে মর্যাদা ও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিন।

● ক্লাস আনন্দময় করে তুলতে হবে। পড়ার চাপ না দিয়ে ধীরে ধীরে শিশুকে পড়ায় ফিরিয়ে আনতে হবে।

● শিশুর সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধিতে পারস্পরিক যোগাযোগ উৎসাহিত করুন।

● স্কুল যে শিশুর জন্য নিরাপদ; সেই বোধ তার মধ্যে তৈরি করুন। স্কুল, শিক্ষক ও সহপাঠীদের ওপর শিশুর আস্থা তৈরিতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিন।

● শিশুটি যখন বাড়িতে থাকবে, তখন কোনো ভয়ভীতি বা ফলাফল নিয়ে টার্গেট চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। যেমন ‘স্কুল অনেক দিন বন্ধ ছিল, বেশি করে পড়তে হবে’, ‘জিপিএ–৫ পেতেই হবে’, এমনটা বলা যাবে না।

কোনো শিক্ষার্থী যদি কাছের স্বজন বা সহপাঠী হারিয়ে থাকে, তবে তাকে শোক প্রকাশের সুযোগ দিন এবং স্কুলে বিষয়টিকে মর্যাদা ও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিন।

● সুযোগ থাকলে শিশুদের খেলার মাঠে খেলতে দিন। মুঠোফোন আর ইন্টারনেটের বাইরে শিশুদের যদি কিছুটা সময় রাখা যায়, তবে তা তাদের মনের যত্নের জন্য কার্যকর হবে।

● ঘুমের রুটিন ঠিক রাখতে উদ্যোগী হতে হবে।

● বাড়িতে শিশুর পাশে সময় করে প্রতিদিন কিছুটা সময় বসুন, কথা বলুন। তার ভালো-খারাপ লাগার বিষয়ে শুনুন। প্রয়োজনে কিছুটা সময় জড়িয়ে ধরুন।

● শিশুদের জোর করবেন না। যেমন ‘এক্ষুনি পড়তে বসো’, ‘এক্ষুনি খাবার খেতে হবে’—এমনটা বলবেন না।

● নির্মমতা, সহিংসতা দেখার পর শিশু মন খারাপ করলে বা ভয় পেলে বুঝিয়ে বলুন, ‘এ ধরনের ঘটনার পর মন খারাপ থাকা স্বাভাবিক। এটা তোমার দুর্বলতা নয়; বরং মানবিক গুণের পরিচয়।’শিশুকে সাহস ও আবেগ প্রকাশের সুযোগ ও ধন্যবাদ দিন।

● ধমক দিয়ে শিশুকে প্রশ্ন করা থামিয়ে দেবেন না। যদি কোনো প্রশ্নের জবাব না থাকে, তবে সেটা বুঝিয়ে বলুন।

এ ছাড়া শিশুর আবেগ, আচরণ আর মনোযোগের সমস্যা যদি ছয় সপ্তাহের চেয়ে দীর্ঘ হয়, তবে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

 

ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ

অধ্যাপকচাইল্ড অ্যাডোলেসেন্ট অ্যান্ড ফ্যামিলি সাইকিয়াট্রিজাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.