কোনো বিষধর প্রাণীর কামড়ে শরীরে যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, তার যথার্থ চিকিৎসা হলো অ্যান্টিভেনাম। এটিই বিষক্রিয়া থেকে নিস্তার পাওয়ার একমাত্র বৈজ্ঞানিক উপায়, যা ইনজেকশন আকারে গ্রহণ করতে হয়। জেলা পর্যায়ে অ্যান্টিভেনামের সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও কেন বিষধর সাপের কামড়ে মানুষ মারা যায়, জানেন? বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রোগীকে ওঝার কাছে নিয়ে ঝাড়ফুঁক ও অপচিকিৎসা করতে গিয়ে দেরি করা হলো মৃত্যুর প্রধানতম কারণ। অ্যান্টিভেনাম দিতে এ জন্য দেরি করা যাবে না। সঠিক সময়ে অ্যান্টিভেনাম দেওয়া হলে বেঁচে যায় প্রাণ।

অ্যান্টিভেনাম বিষকে প্রতিহত করে কিন্তু ততক্ষণে ক্ষতি যতটা হয়ে গেছে, তা ঠিক করতে পারে না। তাই অকারণ কালক্ষেপণ মানেই ঝুঁকি বাড়তে দেওয়া। যে প্রাণীটি দংশন করেছে, সেটি যদি বিষধর বলে পরিচিত হয়ে থাকে অথবা যদি বিষক্রিয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যায়, তখন সঙ্গে সঙ্গে অ্যান্টিভেনাম ইনজেকশন দিয়ে দিতে হবে। কোন প্রজাতির প্রাণী দংশন করেছে, জানতে পারলে ভালো হয়। তবে সেই প্রাণীটিকে ধরে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। বিষধর প্রাণী ধরতে গেলে অন্য ব্যক্তিও দংশনের শিকার হতে পারে। সম্ভব হলে প্রাণীটির ছবি তুলে আনা যেতে পারে।

বিষক্রিয়ার উপসর্গ

কোনো প্রাণী দংশনের পর যেসব উপসর্গ দেখা দিলে অ্যান্টিভেনাম শুরু করতে হয়, সেগুলোর কয়েকটি জেনে নেয়া যাক—

• আক্রান্ত স্থান ফুলে যাওয়া
• আক্রান্ত স্থানে ব্যথা হওয়া
• রক্তপাত হওয়া, যেমন: মাড়ি বা নাক থেকে, কিংবা বমি বা কাশির সঙ্গে রক্ত পড়তে পারে
• আক্রান্ত স্থান অবশ হয়ে যাওয়া
• প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া
• রক্তচাপ কমে যাওয়া

অ্যান্টিভেনাম আসলে কী

বিষধর প্রাণীর বিষ সংগ্রহ করে তার কিছু অংশ ইনজেকশনের মাধ্যমে অন্য একটি প্রাণীতে প্রয়োগ করা হয়। ফলে ওই প্রাণীর শরীরে তৈরি হয় রোগ প্রতিরোধক্ষমতা, অর্থাৎ অ্যান্টিবডি। এই অ্যান্টিবডি পরিশুদ্ধ করে তৈরি হয় অ্যান্টিভেনাম। অ্যান্টিবডি তৈরির জন্য সাধারণত ঘোড়াকে ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া ভেড়া, ছাগল, খচ্চর, খরগোশ, মুরগি, উট থেকেও তৈরি করা যায়।

সাপ ছাড়াও যেসব প্রাণীর দংশনে অ্যান্টিভেনাম দিতে হয়

আমাদের দেশে শুধু বিষধর সাপের অ্যান্টিভেনাম পাওয়া যায়। কিন্তু সাপ ছাড়াও পৃথিবীতে এমন কিছু বিষাক্ত প্রজাতির প্রাণী রয়েছে, যাদের দংশনে বিষক্রিয়া হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে মাকড়সা, মাছ (স্টিং রে ও স্টোন ফিশ), জেলি ফিশ, শুঁয়াপোকা, প্যারালাইটিক টিক এবং বিছায় এ ধরনের মারাত্মক বিষ থাকে।

শেষ কথা

বাংলাদেশে এখন যে রাসেলস ভাইপারের কথা শোনা যাচ্ছে, তাতে আতঙ্কিত না হয়ে সাপ দংশন করলে আক্রান্ত জায়গাটিকে যথাসম্ভব কম নাড়িয়ে দ্রুততম সময়ে হাসপাতালে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। জেলা সদর হাসপাতালে এবং মেডিকেল কলেজে অ্যান্টিভেনাম সরবরাহ করা হয়।

লেখক:

ডা. রোজানা রউফ

অ্যাসোসিয়েট কনসালট্যান্ট, মেডিসিন বিভাগ, স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেড।

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.