আমাদের মুখমন্ডলের হাড়ের ভিতরে চার জোড়া বায়ুপূর্ণ কুঠুরি থাকে, এগুলোকে সাইনাস বলে। সাইনাস গুলোর ভেতর থেকে পাতলা মিউকাস রস নি:সৃত হয়। এই মিউকাস সরু ছিদ্রের মাধ্যমে আমাদের নাকের ভেতর বেরিয়ে আসে এবং এর মাধ্যমে সাইনাসগুলো নিজেরা পরিষ্কার ও জীবানু মুক্ত থেকে নিজেদের কর্মকান্ড পরিচালনা করে।
সাইনাসগুলোর ভেতরে থাকা পাতলা মিউকাস আবরণে যখন প্রদাহ সৃষ্টি হয়, তখন তাকে সাইনুসাইটিস বলে। নাকের মধ্য দিয়ে সাইনাসে বায়ু চলাচল করে। এ প্রক্রিয়ায় বিঘœ ঘটলে বায়ুর পরিবর্তে সেখানে পানি বা তরল পদার্থ জমে প্রদাহ সৃষ্টি হয়। আর তখনই নাক বন্ধ হওয়ার উপসর্গ দেখা দেয়।
কারণ
সাধারণ সর্দি-ঠান্ডা
ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাকের প্রদাহ
নাকে এলার্জি
নাকের ভেতরে মাংসবৃদ্ধি
নাকের মাঝখানের হাড় বাঁকা
নাকের ভেতর পলিপ, টিউমার ইত্যাদি কারণে সাইনুসাইটিস হয়।
সাইনুসাইটিস যেকোন সময়ে, যেকোন বয়সের মানুষের মধ্যে দেখা দেয়। তবে শীত বা শীতের শুরুতে এলার্জি, ঠান্ডা, সর্দি, ইনফ্লুয়েঞ্জা বেশী হয় বলে যাদের উপরের সমস্যা গুলো আছে তাদের ক্ষেত্রে রোগটির প্রকোপতা বেশী দেখা দেয়।
লক্ষণ
নাক বন্ধ, নাক দিয়ে শ^াস-প্রশ^াসে বিঘœ ঘটে
নাক দিয়ে পাতলা, ঘন, হলুদ বা সবুজাভ মিউকাস বের হয়
সর্দি ঠান্ডার সাথে জ¦র থাকতে পারে
নাক, চোখ, গাল, কপালের চার পাশে ব্যথা হতে পারে। চোখের নিচে বা কপালে ফোলাভাব থাকতে পারে
কানের ভেতর চাপ বা বন্ধ ভাব থাকতে পারে
মাথাসহ দাঁতের ব্যথা হতে পারে
ঘ্রাণশক্তি কমে যেতে পারে
মুখ দিয়ে শ^াস-প্রশ^াস নিতে হয়।
প্রতিকার
ঠান্ডা খাবার, ঠান্ডা পানি, আইসক্রিম খাবেন না
গরম পানির ভাপ নিয়ে নাক পরিষ্কার করবেন
কুসুম গরম পানিতে গোসল ও শীতকালে কুসুম গরম পানি পান করুন
বাইরে গেলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করবেন
সর্দি-ঠান্ডা বা ফ্লুতে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ থেকে যথাসম্ভব দুরে থাকবেন
কোন খাবারে এলার্জি থাকলে তা পরিহার করুন
বেশী গরমে বা এক সঙ্গে টানা কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে
বিছানার চাদর, পর্দা, মেঝে নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। ঘরের মেঝেতে কার্পেট ব্যবহার করবেন না
ঘরের চারপাশ খোলামেলা রাখতে হবে এবং স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ পরিহার করতে হবে
শীতকালে রাত বা ভোরে বাইরে বের হতে চাইলে কান-মাথা-গলা ঢাকতে হবে
ধুমায়িত ও দূষিত পরিবেশ পরিহার করুন
যথাসম্ভব ঠান্ডা পানি নাড়াচাড়া করবেন না
স্প্রে, সুগন্ধী, মশার কয়েলের ধোঁয়া এড়িয়ে চলুন
ঘুমানোর সময় মাথা উঁচু করে ঘুমান। এতে করে সাইনাস পরিষ্কার হবে।
ব্যবস্থাপনা
যদি ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যে উপরোক্ত লক্ষণগুলির উন্নতি না হয়, কিংবা একটানা জ¦র, চোখ ঝাপসা, চোখ-মুখ ফুলে লাল হওয়া, প্রচুর মাথাব্যথ্যা, বমিভাব বা বমি, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, ঘাড় শক্ত হওয়া ইত্যাদি লক্ষণগুলো উপস্থিত থাকলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। যথাযথ ব্যবস্থাপত্র ব্যতীত নাকের ড্রপ ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ৩ থেকে ৫ দিনের বেশি ড্রপ ব্যবহার করবেন না। ড্রপ দীর্ঘদিন ব্যবহারে আরো বেশি নাক বন্ধ হতে পারে এবং ঘ্রান শক্তি কমে যেতে পারে।
কননালট্যান্ট, রেনেসাঁ হোমিও মেডিকেয়ার
২৫/৩, নবাব কাটারা, নিমতলী, চাঁনখারপুল,
ঢাকা-১০০০।