অনেক বাবা-মার ধারণা, বাচ্চা যত গোলগাল নাদুসনুদুস সে ততই সুস্বাস্থ্যের অধিকারী। অধিকাংশ সময় অতিরিক্ত ওজন বিভিন্ন শারীরিক এবং মানসিক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।

যেভাবে বুঝবেন আপনার বাচ্চা স্থূল

নিয়মিত বাচ্চার দৈহিক ওজন মাপুন। প্রত্যেক বয়সের জন্য একটা কাঙ্ক্ষিত দৈহিক ওজন আছে। যদি আপনার বাচ্চার ওজন তার জন্য নির্দিষ্ট মাপের থেকে ২০ শতাংশ বেশি হয় তাহলে বুঝবেন, বাচ্চার ওবেসিটির সমস্যা রয়েছে।

বেসাল মেটাবলিক পার্সেন্টাইল চার্ট ব্যবহার করেও ওবেসিটি মাপা যায়। আপনার বাচ্চার মেটাবলিক ইনডেক্স যদি ৯৫ পার্সেন্টাইলের ওপরে হয় তাহলে জানবেন, আপনার বাচ্চা স্থূলতার বা ওবিস গ্রুপে পড়েছে।

যে কারণে স্থূলতা

বাচ্চারা আজকাল খুব একটা খেলাধুলা-ছোটাছুটির সুযোগ পায় না। বাড়িতে বসে ইন্টারনেট সার্ফ বা ভিডিও গেম খেলা বা টেলিভিশন দেখাটাই তাদের কাছে প্রধান আকর্ষণ। এ রকম শারীরিক শ্রমহীন জীবনযাপনের জন্য যথারীতি বাচ্চাদের ওজন বাড়তে থাকে এবং ক্রমেই তারা ওবেসিটির দিকে এগোয়। খেলাধুলা ছেড়ে বাচ্চারা বাড়িতে বসে টিভি দেখাটা বেশি পছন্দ করে। আর টিভি দেখতে দেখতে চিপস, চকলেট, পপকর্নের মতো মুখরোচক খাবার খাওয়া এখন রীতিমতো অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এক দিকে ক্যালরি গ্রহণ বৃদ্ধি, অন্যদিকে খেলাধুলার প্রতি অনীহা- সব মিলিয়ে ওজন দ্রত হারে বাড়তে থাকে। বাচ্চাদের যদি জিজ্ঞেস করা হয়, তারা কী খেতে ভালোবাসে? বেশিরভাগ বাচ্চাই উত্তর দেবে- চকলেট, কোল্ড ড্রিংক, আইসক্রিম, বার্গার এসব। আর কেক-পেস্ট্রি তো আছেই। এসব খাবারের মধ্যে ক্যালরির পরিমাণ খুব বেশি থাকে, যা স্বাভাবিকভাবেই ওজন বাড়িয়ে দেয়।

বাচ্চারা সাধারণত বাবা-মাকে দেখে অনেক কিছু শেখে। আর আজকালের বাবা-মা’রা শারীরিক শ্রম বা ব্যায়ামের ব্যাপারে বেশ উদাসীন। বেশিরভাগ পরিবারেই আজকাল বাচ্চার সংখ্যা ১ বা ২ জন। ফলে বাবা-মায়েরা একটু বেশি তাদের প্যাম্পার খাবার ব্যাপারে জোরাজুরি করে থাকেন। বাচ্চার স্বাস্থ্য ভালো হবে এ ভেবে অনেক সময় তারা বেশি করে বাচ্চাকে খাওয়াতে থাকেন। শুধু বাচ্চার আবদার রক্ষা করতে তার যা খেতে ইচ্ছা করে সেই খাবার চোখের নিমিষে হাজির হয়ে যায়- তা সে যতই হাই-ক্যালরিযুক্ত হোক না কেন।

মোটা হয়ে যাওয়ার দুর্গতি

* ছোটবেলায় যদি আপনার বাচ্চা অতিরিক্ত মোটা হয়, বড় হয়ে ওজন আরও বাড়তে পারে ফলে নানা রকম অসুখ যেমন করোনারি হার্ট ডিজিজ, ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন ইত্যাদি হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।

* অতিরিক্ত ওজনের ফলে বাচ্চা সহজেই ক্লান্ত এবং কর্ম উদ্যমহীন হয়ে পড়ে।

* অনেক সময় মোটাসোটা বাচ্চারা স্কুলের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে পুরোপুরি অংশগ্রহণ করতে পারে না। কখনও কখনও অন্য বাচ্চারাও নানা রকমভাবে স্থূলকায় বাচ্চাদের টিজ করে। ওদের মধ্যে হীনমন্যতা বোধ বা মানসিক চাপ দেখা যায়। মাত্রাধিক ওজনের কারণে মুটিয়ে যাওয়া বাচ্চারা জয়েন্ট পেইন বিশেষ করে হাঁটুতে ব্যথার অভিযোগ প্রায়ই করে থাকে।

যেভাবে ওবেসিটি ম্যানেজ করবেন

* ৬ মাস বয়স পর্যন্ত বাচ্চাকে শুধু মায়ের বুকের দুধ খাওয়ান, এতে ওবেস হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে।

* বাচ্চাকে স্বাস্থ্যকর খাবার অভ্যাস গড়ে তুলতে উৎসাহিত করুন। সুষম খাদ্যের ওপর নজর দিন। খেয়াল রাখবেন যেন খাদ্যে প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেল পরিমাণমতো থাকে। কোনো কিছুরই আধিক্য যেন না থেকে তাহলেই বাচ্চা ভালোভাবে বেড়ে উঠবে।

* টিভি দেখতে দেখতে বাচ্চার চিপ্স, সফট ড্রিংক খাওয়ার অভ্যাসকে প্রশ্রয় দেবেন না। আউটডোর গেমস খেলতে বাচ্চাকে উৎসাহ দিন। কোভিডের সময়ে বাচ্চাকে স্কিপিং, ফ্রি হেন্ড এক্সারসাইজ, জিমবাইক এসবে অভ্যাস করুন।

* বাড়িতে জাঙ্কফুড খাওয়ার অভ্যাস কমান। বাচ্চাকে বাড়ির খাবার সুন্দর করে সাজিয়ে-গুছিয়ে খেতে দিন, যাতে বাইরের খাবারের প্রতি তার আকর্ষণ কমে যায়।

 

লেখক :

কায়সুন নেসা লিসা 

পুষ্টি বিশেষজ্ঞ

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.