ইলিমিনেশন ডিজঅর্ডার বা নিষ্কাশন ব্যাধি একটি শৈশবকালীন সমস্যা, যেখানে শিশু প্রস্রাব বা পায়খানা নিয়ন্ত্রণ করতে সমস্যা বোধ করে। শিশুবয়সের জন্য প্রত্যাশিত বয়সের তুলনায় বেশি সময় ধরে এ সমস্যা চললে সেটি নিষ্কাশন ব্যাধি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিছু ক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়সেও কেউ এ সমস্যায় ভুগে থাকেন।

প্রধান দুটি ধরন

নিষ্কাশন ব্যাধির প্রধান দুটি ধরন। একটি প্রাইমারি বা প্রাথমিক ইলিমিনেশন ডিজঅর্ডার, অন্যটি সেকেন্ডারি ইলিমিনেশন ডিজঅর্ডার। প্রাথমিক ডিজঅর্ডার তাদের ক্ষেত্রে বলা হয়, যাদের এ পর্যন্ত কখনো প্রস্রাব বা মলত্যাগে নিয়ন্ত্রণ আসেনি। সেকেন্ডারি ডিজঅর্ডারের ক্ষেত্রে আগে শিশুর প্রস্রাব বা মলত্যাগে নিয়ন্ত্রণ ছিল, কিন্তু পরে কোনো কারণে তা নষ্ট হয়ে গেছে।

অন্যান্য ধরন

  • প্রস্রাব-সংক্রান্ত নিষ্কাশন ব্যাধি: এটি শিশুর প্রস্রাব নিয়ন্ত্রণে সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কিত। এটি দুই ধরনের হতে পারে। এক. রাতে ঘুমের মধ্যে প্রস্রাব করা; কিন্তু দিনে সমস্যা থাকে না। দুই. দিনের বেলা প্রস্রাবের সমস্যা; যারা বিদ্যালয়ে বা অন্য কোনো স্থানে থাকাকালীন প্রস্রাব নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।
  • পায়খানা-সংক্রান্ত নিষ্কাশন ব্যাধি: এটি শিশুর পায়খানা নিয়ন্ত্রণে সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কিত। এটিও দুই ধরনের হতে পারে। এক. শিশুর পেটে বেশি পরিমাণে পায়খানা জমা হয়। তাই নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হয়। দুই. পায়খানা নিয়ন্ত্রণের অক্ষমতা ও অস্বাভাবিকভাবে পায়খানা করা।

শিশুর মলমূত নিষ্কাশন ব্যাধি সঠিক চিকিৎসা ও পরিবারের সদস্যদের আন্তরিকতায় এটি সমাধান করা সম্ভব।

কারণ

  • মূত্রথলির ছোট আকার, হরমোনের সমস্যা, মূত্রনালির সংক্রমণ।
  • মস্তিষ্কের নিয়ন্ত্রণকেন্দ্রের সমস্যা।
  • মানসিক চাপ, বিষণ্নতা, আত্মবিশ্বাসের অভাব।
  • পরিবারের অন্য সদস্যের একই সমস্যা থাকলে শিশুরও ঝুঁকিতে পড়া।

চিকিৎসা

  • নিষ্কাশন ব্যাধির চিকিৎসা কারণের ওপর নির্ভর করে। শারীরিক সমস্যা ও সংক্রমণ শনাক্ত করতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রস্রাবের পরীক্ষাসহ কিছু ইনভেস্টিগেশন করে থাকেন। পরে চিকিৎসক প্রস্রাব বা মলত্যাগ নিয়ন্ত্রণে সহায়তাকারী ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেন।
  • বায়োফিডব্যাক থেরাপির মাধ্যমে শিশু তার শারীরিক ক্রিয়াকলাপ সম্পর্কে সচেতন হয় ও সেই অনুযায়ী তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
  • বেডওয়েটিং অ্যালার্ম শিশুকে প্রস্রাব করার আগেই নির্দিষ্ট একটি সময়ে জাগিয়ে তোলে।
  • আচরণগত থেরাপি নিয়মিত প্রস্রাব বা মলত্যাগের অভ্যাস গড়ে তুলতে সহায়তা করে।
  • সাইকোথেরাপি-সংশ্লিষ্ট মানসিক সমস্যাগুলো সমাধানে সহায়ক হতে পারে, যা ইলিমিনেশন ডিজঅর্ডারের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। থেরাপিস্টরা বিভিন্ন পদ্ধতিতে মানসিক চাপ কমাতে কাজ করেন।

শেষ কথা

নিষ্কাশন ব্যাধি শিশু ও পরিবারের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ বলে মনে হতে পারে। তবে সঠিক চিকিৎসা ও পরিবারের সদস্যদের আন্তরিকতায় এটি সমাধান করা সম্ভব। যদি আপনার সন্তানের এ ধরনের সমস্যা থাকে, তবে একজন শিশু-কিশোর মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

 

ডা. টুম্পা ইন্দ্রানী ঘোষ

সহকারী অধ্যাপকশিশু-কিশোর ও পারিবারিক মনোরোগবিদ্যা বিভাগময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.