শিশুদের পেটের টুকটাক সমস্যা হবেই, এমনটা ধরে নেন অনেকে। এমনটা ভাবার অন্যতম কারণ হলো অজ্ঞতা ও সচেতনতার অভাব। মূলত শিশুর পেটের সমস্যা নিয়মিত দেখা দেয় সাত মাস বয়স থেকে পাঁচ বছর বয়সের মধ্যে।
পেটের গুরুতর সমস্যার লক্ষণ :
বমি
ক্রনিক ইনটলারেন্স
মলের সঙ্গে রক্ত বেরোতে পারে
কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া
জিয়ার্ডিয়া, ইনফেকশন ও সর্বোপরি ভীষণ পেটব্যথা
এ ছাড়া ওজন কমে যাওয়া, সারাক্ষণ কান্নাকাটি করা, খেতে না চাওয়া, প্রস্রাব কম হওয়া, খাওয়ার পর বমি করা—এসব লক্ষণও থাকতে পারে।
কেন হয়
l শিশুর ইচ্ছার বিরুদ্ধে বেশি খাওয়ালে এ সমস্যা বেশি হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন ফুড অ্যালার্জি যেমন গরুর দুধের অ্যালার্জি বা ভাইরাস ইনফেকশন থেকেও হয়।
l আবার পেটে কোনো স্থানে অবস্ট্রাকশন থাকলেও বমি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এমনিতে মেটাবলিজম সিস্টেমে সমস্যার জন্য বমি হওয়া আশ্চর্য কিছু নয়। ক্রনিক ইনটলারেন্সের মধ্যে সিলিয়াক ডিজিজ সম্পর্কে অনেকের কোনো ধারণা নেই। গম বা গমজাতীয় খাবার থেকে এ ধরনের অ্যালার্জি হয়।
l মিল্ক প্রোটিন অ্যালার্জি থেকে ইনটেসটিনে সমস্যা দেখা দিতে পারে। কনস্টিপেশন বা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হয় মূলত খাবারে ফাইবারের পরিমাণ কম থাকলে ও পানি কম খেলে।
l ডায়রিয়া হয় ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ইনফেকশন এবং পচাবাসি খাবারের কারণে। তবে খাবার গিলতে সমস্যা, বমি, শ্বাস নিতে সমস্যা বা বেশি কাশি হলে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
সতর্কতা
l পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাই শিশুর পেটের সমস্যার সমাধানের অন্যতম উপায়। শিশুর গায়ে যেন কোনো ময়লা বেশিক্ষণ না থাকে বা ময়লা কাপড় যেন না পড়ে। কারণ তারা ময়লা না বুঝেই সব মুখে দিয়ে চিবুতে থাকে। এতে সরাসরি পেটে ব্যাকটেরিয়া চলে যায়। শিশুর নখ কাটুন নিয়মিত। তাদের হাত ধুয়ে খাওয়ার অভ্যাস করান।
l বাইরের প্রসেস করা খাবার বা চকমকে মোড়কে রাখা এটা-সেটা খাওয়াবেন না। যতটা সম্ভব ঘরের খাবারে অভ্যস্ত করাতে হবে। ঘরের রান্না করা খাবার ফ্রিজে থাকলেও দেখা যায় দুই-তিন দিন পর আমরা তা শিশুকে খেতে দিই না। অথচ দীর্ঘদিন দোকানের শেলফে রাখা প্যাকেটজাত খাবার কিন্তু ঠিকই তার হাতে তুলে দিচ্ছি। এ অভ্যাস বাদ দিয়ে তাজা শাকসবজি, ফলমূল যত বেশি খাওয়াবেন, ততই সুস্থ থাকবে শিশু। এসব খাবার তার সঠিক বিকাশেও কাজে লাগবে।
লেখক :
ডা. উজ্জ্বল কুমার রায়
মেডিসিন ও গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট