শিশুদের সাম্প্রতিক জ্বর এবং এর তীব্রতা অভিভাবক ও চিকিৎসকদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। জ্বরের মধ্যে ডেঙ্গু, টাইফয়েড, প্রস্রাবে সংক্রমণজনিত জ্বর, রক্ত আমাশয় উল্লেখযোগ্য। টাইফয়েড পানিবাহিত রোগ সালমোনেলা টাইফি নামক ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে হয়। সংক্রমিত হওয়ার ১০ থেকে ১৪ দিন পর জ্বরসহ এ রোগের অন্যান্য লক্ষণ দেখা দেয়। পানিবাহিত সালমোনেলা জীবাণু দূষিত পানি ছাড়াও দুধ অথবা দুগ্ধজাত সামগ্রী থেকে মানবদেহে সংক্রমিত হতে পারে। টাইফয়েড যেকোনো বয়সেই হতে পারে। তবে পাঁচ বছরের নিচের শিশুদের তীব্রভাবে এ রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। জ্বরের পাশাপাশি বমি, পাতলা পায়খানাসহ মাথাব্যথা হয়। এ ছাড়া পেটে ব্যথা, পেট ফুলে যাওয়াসহ জিবের ওপর সাদা প্রলেপ পড়তে দেখা যায়।

সাত দিন জ্বর থাকার পর বুক, পেট এবং পিঠে লালচে দানার মতো র‌্যাশ দেখা যায়। এসব দানা হাতের আঙুলের চাপে অদৃশ্য হয়ে যায়। জ্বরের প্রথম সাত দিন পরও যথাযথ চিকিৎসা শুরু না করলে শিশুদের নানা মারাত্মক জটিলতা দেখা দেয়Ñযেমন খিঁচুনি, অসাড় বোধ, পেট ফোলা, রক্ত পায়খানা, জন্ডিস এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।

কখনও কখনও চতুর্থ সপ্তাহে জ্বর নিজে থেকে ভালো হয়ে যায়। অনেক সময় জ্বর কমে শিশু সুস্থ বোধ করলেও খুশি হওয়ার কারণ নেই। কারণ, এ সময় শিশু ক্রমাগত আরও অসুস্থ হয়ে পড়তে থাকে। অন্যান্য জটিলতার মধ্যে নিউমোনিয়া, হাড়ের প্রদাহ, অস্থিসন্ধির প্রদাহ, স্নায়ুতন্ত্রের সংক্রমণ, হƒৎপিণ্ডের মাংসপেশিতে প্রদাহ ও কিডনির প্রদাহ দেখা দিতে পারে।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা: জ্বরের প্রথম সপ্তাহে টাইফয়েড নির্ণয় করা বেশ কঠিন। পরে রক্ত ও প্রস্রাব-পায়খানার কালচার পরীক্ষা এবং ভিডাল টেস্ট করে রোগ শনাক্ত করা সম্ভব।

হাসপাতালে ভর্তিযোগ্য শিশু : মাত্রাতিরিক্ত জ্বর, বারবার বমি, পেট ফোলা, পায়খানায় রক্ত, খিঁচুনি এবং অজ্ঞান হওয়ার মতো পরিস্থিতি হলে দ্রুত নিকটবর্তী হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে।

চিকিৎসা: পুষ্টিকর খাওয়া-দাওয়া ও বিশ্রাম, জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল সিরাপ বা ট্যাবলেট, যথাযথ অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করতে হবে। জ্বর কমে যাওয়ার পরও ৩-৫ দিন অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খেতে হবে। ভালো অ্যান্টিবায়োটিকে চিকিৎসা করলেও জ্বর ৫-৭ দিন থাকতে পারে। এ সময় অধৈর্য হওয়া যাবে না। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলাই সর্বোত্তম।

প্রতিরোধ কৌশল: পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মেনে চলা, নিরাপদ পানি ও খাবার গ্রহণ, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহার, টিকা নেয়ার মাধ্যমে টাইফয়েড প্রতিরোধ করা যায়। এক বছর থেকে ছোট-বড় সবাই এই টিকা নিতে পারে। সবার জন্য তিন বছর পরপর এই টিকার একটি ডোজ মাংসপেশিতে দিতে হয়। টাইফয়েড কোনো ছোঁয়াচে জ্বর নয়। সময়মতো যথাযথ চিকিৎসা নিলে শতভাগ ক্ষেত্রে এ রোগ ভালো হয়ে যায়।

 

ডা. ইমনুল ইসলাম

অধ্যাপক, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, আলোক হেলথকেয়ার লিমিটেড, মিরপুর

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.