শিশুদের প্রধান সঙ্গী এখন টেলিভিশন, কম্পিউটার, মুঠোফোন, ভিডিও গেমস, ইন্টারনেট প্রভৃতি। উপমহাদেশে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিশু প্রতিদিন ২ ঘণ্টার বেশি সময় টেলিভিশন দেখে। অতি ডিভাইসপ্রীতি শিশুর সুস্থ বিকাশ ও মনোসামাজিক সুরক্ষার অন্তরায়।
শিশু-কিশোরদের ওপর প্রভাব: অসামাজিকতা: শিশুরা স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের অভ্যাস যেমন খেলাধুলা, কায়িক শ্রম, জনসেবা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড এমনকি পরিবারে সময় না দিয়ে গ্যাজেট নিয়ে মেতে থাকে। সে হয়ে ওঠে অসামাজিক জীব, স্বার্থপর।
আচরণজনিত সমস্যা: মারদাঙ্গা দৃশ্য দেখতে দেখতে শিশুও অল্পতেই ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠে। শিশু নিয়মিত এসব দেখলে লেখাপড়ায় প্রভাব পড়ে। ছোট শিশুদের কেউ কেউ হতাশায় ভোগে। ‘এডিএইচডি’ বা ‘শিশুর অমনোযোগিতা’ রোগের অন্যতম কারণ বেশি টেলিভিশন দেখা। টিভি, সিনেমায় আসক্ত শিশুদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতাও বেশি।
স্থূল ওজনের শিশু: সপ্তাহে কোনো শিশু ১ ঘণ্টার বেশি টেলিভিশন দেখলে তার স্থূলকায় হওয়ার ঝুঁকি প্রায় ২ শতাংশ বেড়ে যায়। বসে বসে টিভি দেখলে শিশু খায়ও বেশি। টেলিভিশন বা ইন্টারনেটে বিজ্ঞাপন দেয়া অস্বাস্থ্যকর খাবার পছন্দ করে। যেসব শিশু বেশি টেলিভিশন দেখে, তারা ফলমূল-শাকসবজি কম খায়।
খাওয়ার বদভ্যাস: ফ্যাশন ম্যাগাজিন দেখে ও পড়ে, বয়ঃসন্ধিকালে শিশু নিজের ওজন ও ফিগার নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভোগে। ওজন কমাতে বিকৃত খাদ্য রুটিন বেছে নেয়।
ধূমপান, মাদকাসক্তি ও ঝুঁকিপূর্ণ যৌন আচরণ: মা-বাবার অনুমতি ও উপস্থিতি ছাড়া যেসব শিশু দিনে দুই ঘণ্টার বেশি টেলিভিশন দেখে, তারা এসবের ঝুঁকিতে থাকে বেশি।
করণীয়: শিশু বয়সে গ্যাজেট কতটা ব্যবহার করবে, তার একটা নির্দেশিকা দিয়েছে আমেরিকান একাডেমি অব পেডিয়াট্রিকস (এএপি); বেডরুমে টিভি, ভিডিও গেমস ও ইন্টারনেট সংযোগ রাখা যাবে না; মানসম্পন্ন অনুষ্ঠান দিনে সর্বোচ্চ ১-২ ঘণ্টা দেখা; দুই বছরের কম বয়সী শিশুকে টেলিভিশন দেখতে নিরুৎসাহিত করা; কী দেখা হলো, তা নিয়ে সবাই আলোচনা করা; খাওয়ার সময় টিভি বন্ধ রাখা; প্রযুক্তিকে প্রতিপক্ষ না ভেবে কী করে তাকে শিশু-কিশোরবান্ধব হিসেবে ব্যবহার করা যায়, সেই প্রস্তুতি গ্রহণ।
অধ্যাপক ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী
সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল