বাড়ন্ত শিশুদের প্রায়ই হাত-পা ব্যথার অভিযোগ করতে শোনা যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিশুদের এমন ব্যথা হলে অভিভাবক, এমনকি চিকিৎসকেরাও বাতজ্বর বা বাতরোগ হয়েছে ভেবে চিন্তিত হয়ে পড়েন। তবে এটি হতে পারে স্রেফ গ্রোয়িং পেইন। এক গবেষণায় দেখা যায়, আমাদের দেশের স্কুলপড়ুয়া শিশুদের প্রায় ২০ শতাংশের মধ্যে দেখা যায় এ সমস্যা। যদিও নামকরণ করা হয়েছে ‘গ্রোয়িং পেইন’, কিন্তু শিশুর শারীরিক বৃদ্ধির সঙ্গে এর সম্পর্ক নেই। তবে বলা হয়ে থাকে, এসব শিশুর ব্যথা সহ্য করার প্রবণতা কম। পাশাপাশি তাদের পেটব্যথা ও মাথাব্যথার অভিযোগ করতে দেখা যায়। গ্রোয়িং পেইন সহজেই চিকিৎসা করা যায়। তবে এ রোগের সঙ্গে কিছু বিষয়ের প্রভাব উল্লেখ করা যেতে পারে, যেমন পারিবারিক প্রভাব, মানসিক চাপ বা অস্থিরতা, বেশি দৌড়াদৌড়ি ও লাফালাফি। গ্রোয়িং পেইনের প্রভাবে ঘুমের বিঘ্ন ঘটে, শিশু রাতে পা-ব্যথায় ঘুমাতে পারে না। খেলাধুলায় বা স্কুলে যেতে অনীহা দেখা দেয়। এ ব্যথা রোজ রোজ হয় না; তবে আসা-যাওয়া করে।

কীভাবে বুঝবেন: বয়স চার থেকে ১২ বছরের মধ্যে এবং ছেলে বা মেয়েশিশু উভয়ে সমানভাবে আক্রান্ত হতে পারে। সাধারণত সন্ধ্যা বা রাতে এ ব্যথা দেখা যায়। স্থায়িত্ব ১০ থেকে ৩০ মিনিট। দুই পায়ের সামনে ঊরু এবং হাঁটুর নিচের সামনে-পেছনের মাংসপেশিতে ব্যথা অনুভূত হয়। তবে সকালের দিকে শিশু ভালো বোধ করে। ব্যথার তীব্রতা ক্ষেত্রভেদে হালকা থেকে তীব্রতর হতে পারে। ব্যথা মাঝেমধ্যে অনুভূত হয় এবং ব্যথামুক্ত সময়কালের ব্যবধান কয়েক দিন থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত। আবার অনেকে প্রায় দিনই ব্যথার অভিযোগ করতে পারে।

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়: শিশুর ওজন বেড়ে যাওয়া। অতিরিক্ত খেলাধুলা। পরিবারের অন্য সদস্যদের এ রোগের ইতিহাস।

রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা: ল্যাবরেটরি ফলাফল সাধারণত স্বাভাবিক থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোগের ইতিহাস থেকে এ রোগ শনাক্ত করা সম্ভব। তবে অনেক সময় এসব শিশুর রক্তে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি কম পাওয়া যায়। মাংসপেশিতে ম্যাসাজ করা এবং প্রয়োজনে ব্যথা কমাতে প্যারাসিটামল ছাড়াও আক্রান্ত স্থানে গরম পানির সেঁক দেয়া যেতে পারে। অনেক সময় ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়াম রক্ত মেপে কম পাওয়া গেলে এসব ওষুধ খাওয়ালে ব্যথা উপশম হয়।

কখন সতর্কতা: ব্যথার সঙ্গে গিরাব্যথা, গিরা ফোলা ও জ্বর থাকলে; তীব্র ব্যথার জন্য ঘুম ভেঙে গেলে এবং দৈনন্দিন কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটলে; জ্বরের সঙ্গে ত্বকে লাল লাল দাগ দেখা গেলে; শিশুর খাবারে অনীহা ও ওজন কমতে থাকলে।

শেষ কথা: আক্রান্ত শিশুর লক্ষণগুলো সুনির্দিষ্ট। তাই চিকিৎসক সহজেই এসব শিশুকে চিহ্নিত করতে পারেন। এটি কোনো দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা সৃষ্টি করে না। তবে মা-বাবাকে কখন সতর্ক হতে হবে, তা বুঝতে হবে।

 

ডা. ইমনুল ইসলাম

অধ্যাপক, শিশু বিভাগ

আলোক হেলথকেয়ার, মিরপুর-১০, ঢাকা

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.