ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। এজন্য রোজা রাখলে তাদের কিছু সমস্যা রয়েছে, যা জটিল আকার নিতে পারে। এ সময় করণীয় বিষয়ে সাক্ষাৎকারে বিস্তারিত জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডায়াবেটিস ও হরমোন রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শাহজাদা সেলিম।
তিনি বলেন, যখন ১৪-১৫ ঘণ্টা রোজা রাখতে হয় তখন রক্তে গ্লুকোজ কমে যেতে পারে। পানিস্বল্পতা দেখা দিতে পারে। যাদের কিডনিতে সমস্যা রয়েছে, তা আরও বাড়তে পারে। ডায়াবেটিসের রোগীরা অনেক সময় মনে করেন, রোজা রেখে তারা ওজন কমাতে পারবেন। কিন্তু এটি সবার ক্ষেত্রে সঠিক নয়। রমজানের পর দেখা যায়, কারও ওজন অনেক বেড়ে যায়। আবার কারও কমে। এজন্য নিরাপদে রমজান মাস পালন করার জন্য ডায়াবেটিস রোগীদের আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে হয়।
ডা. শাহজাদা সেলিম বলেন, ডায়াবেটিসের রোগীদের পানিশূন্যতা দেখা দিলে ঠোঁট, মুখ, চোখ শুকিয়ে যাবে। এটি রোগী নিজেই বুঝতে পারবেন। শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়বেন। ডায়রিয়া হওয়ার ফলে যে পানিশূন্যতা দেখা দেয়, ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে একই রকম পানিশূন্যতা দেখা দিবে। রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে গেলে রক্ত ঘন হয়ে যায়। এটি রক্তনালী বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণ হতে পারে। এটি কিন্তু মারাত্মক ভয়াবহ। তাই রোজার সময় অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি বলেন, ডায়াবেটিস রোগীরা মেপে যদি দেখেন সুগার ৩ দশমিক ৯, অবশ্যই রোজা ভেঙে ফেলতে হবে। সেই মুহূর্তে গ্লুকোজ জাতীয় কিছু থাকলে পানিতে মিশিয়ে খেয়ে ফেলতে হবে। তা না থাকলে চিনিজাতীয় বা মিষ্টিজাতীয় খাবার খেয়ে নিতে হবে। এ ছাড়া মধু থাকলে আঙুলে নিয়ে জিহ্বার নিচে দিলে খুবই দ্রুত কাজ করবে। সুগার কমে গেলে এ কাজগুলো সাথে সাথে না করতে পারলে, স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন এবং এক্ষেত্রে মৃত্যুর সম্ভাবনা অনেক বেশি। যেহেতু রোজার সময় ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে, তাই সাবধানতাও বেশি করে নিতে হবে।
ডা. শাহজাদা সেলিম বলেন, রক্তে সুগার বেড়ে গেলে ঘনঘন পিপাসা পাবে ও প্রস্রাব হবে। রোগী কাজ করার কোনো শক্তি পাবে না। এমনটি হলে সুগার মেপে নিতে হবে এবং সুগার লেভেল ১৬ দশমিক ৭ এর উপরে গেলে রোজা ভেঙে ফেলতে হবে। কিন্তু কারও সুগার লেভেল ১৩ কিংবা ১৪ থাকলে ইনসুলিন নিয়ে রোজা রাখতে পারবেন।
তিনি আরও বলেন, ৩০ থেকে ৫০ বছর বয়সীদের একটা নির্দিষ্ট সময় পরপর ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা উচিত। কারণ, আমাদের দেশের ১০০ ডায়াবেটিস রোগীর মধ্যে ৫৬ জনই জানেন না, তার শরীরে এটি বাসা বেঁধে আসে। এসজন্য সব সময় নিজের স্বাস্থ্যের বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। বিজ্ঞানীরা সতর্ক করছেন, বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের নতুন ধরন অনেক ভয়াবহ হতে পারে। সুতরাং সতর্ক হওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের ঘরে-বাইরে সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। যতটুকু সম্ভব ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে। বাইরে গেলে মাস্ক পড়তে হবে, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে। বাইরে থেকে এসে কাপড় চোপড় পরিষ্কার করে ফেলতে হবে, হাত-পা ধুয়ে পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। সর্বোপরি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
ডাঃ শাহজাদা সেলিম
ডায়াবেটিস ও হরমোন বিশেষজ্ঞ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল