ডিম একটি পুষ্টিকর খাদ্য। এটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। ডিমে আছে ভিটামিন ‘সি’ বাদে প্রায় সব রকম ভিটামিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়োডিন, কলিন ও সিলেনিয়ামসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থ।
‘ফুড স্ট্যান্ডার্ড এজেন্সি’ ডিমকে একটি উচ্চমানের প্রোটিনসমৃদ্ধ খাদ্যের তালিকায় রেখেছেন। বর্তমান সমিক্ষায় দেখা গেছে, ডিমে যে চর্বি থাকে তার তিন-চতুর্থাংশ হচ্ছে হার্ট এবং রক্তনালির জন্য উপকারী অসম্পৃক্ত চর্বি আর বাকি সামান্যটুকু অহিতকর সম্পৃক্ত চর্বি। সবকিছু মিলে ডিম আমাদের জন্য ভালো।
কিন্তু ডিম খাওয়া নিয়ে মানুষের মধ্যে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। ডিম খাওয়া নিয়ে মানুষের মনে অনেক আতঙ্ক। ডায়াবেটিস, হার্টের রোগ, কিডনি, উচ্চরক্তচাপ ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত রোগীরা ডিম খাওয়ার কথা শুনেই আঁতকে ওঠেন। তাদের মতে ডিম খাওয়া স্বাস্থ্যর জন্য ভালো না। ডিমে বেশি কোলেস্টেরল আছে, ডিম খেলে রক্তচাপ বেড়ে যাবে, ডায়াবেটিস বেড়ে যাবে ইত্যাদি ইত্যাদি। তারা এতটাই আতঙ্কিত যে তাদের ডায়েটে ডিম উল্লেখ করলেই আশ্চর্য হয়ে যায়। তাদের জন্য বলছি, চর্বিযুক্ত মাংস এবং দুগ্ধজাত পণ্য খেয়ে যতটা কোলেস্টেরল বাড়ে, ডিম খেলে ততটা বাড়ে না, সুতরং ধমনি এবং হৃদরোগের জন্য ডিম বেশি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হতে পারে না এবং ভয় পেয়ে ডিমকে খাদ্য তালিকা থেকে একেবারেই বাদ দেয়া বা ডিমের কুসুম বাদ দেয়া ঠিক নয়। সে ক্ষেত্রে একজন পুষ্টিবিদ/ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নিয়ে আপনার ডায়েটে ডিম রাখতে পারেন।
তবে হ্যাঁ একটা সময় ডিমকে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বলে মনে করা হতো। ডিম কোলেস্টেরল এবং সালমনেলা এর একটি উৎসÑ আর এভাবে ডিমকে কয়েক বছর স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ বলে মনে করা হতো। ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশন ২০০৭ সালে সপ্তাহে ৩টি ডিম খাওয়ার মধ্যে যে সীমাবদ্ধ থাকার পরামর্শ দিয়েছিল এখন সেই পরামর্শ বাদ দিয়ে ডিম খাওয়ার ব্যাপারে উৎসাহিত করছেন। গবেষণায় বলেছে, খাদ্যে উচ্চমাত্রায় কোলেস্টেরল উল্লেখযোগ্যভাবে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রায় প্রভাবিত নাও করতে পারে, আর এ কারণেই ডায়েটে কোলেস্টেরলের ক্ষেত্রে আগের সীমাবদ্ধতা আর নেই।
তাইবলে, প্রতিদিন ইচ্ছামতো ডিম খাওয়াটাও স্বাস্থ্যসম্মত নয়। মনে রাখতে হবে, অতিরিক্ত কোনো কিছুই স্বাস্থ্যের জন্য ঠিক নয়। সেটা যত অধিক পুষ্টিগুণসম্পন্ন হোক না কেন। মানুষের দেহের চাহিদা ও উপযোগিতার ওপর ভিত্তি করে প্রত্যেক খাবার গ্রহণের একটি নির্দিষ্ট মাত্রা বা পরিমাণ রয়েছে। তাই দেহের প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণে উপযোগী খাদ্য বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই একজন পুষ্টিবিদ/ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। একজন পুষ্টিবিদ/ডায়েটিশিয়ানই আপনার শরীরের পুষ্টি চাহিদা যাচাই করে আপনার রোগ অনুযায়ী খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ নির্ধারণ করে দেবে।
মানুষের দেহে রোগের ধরন অনুযায়ী অনেক সময় অনেক পুষ্টি উপাদানসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণের মাত্রা কম বা বেশি গ্রহণের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। আবার অনেক খাবার গ্রহণ থেকেও বিরত থাকতে হতে পারে। কিন্তু সেটি ব্যক্তিভেদে নির্ভর করে। একজন ডায়াবেটিস রোগীর দেহে ডায়াবেটিসের পাশাপাশি অন্যান্য রোগ থাকতে পারে সে ক্ষেত্রে তার খাদ্যগ্রহণে যে সতর্কতা থাকে সেটা অন্য আরেকজন সাধারণ রোগীর জন্য নাও থাকতে পারে। আবার কিডনিরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের খাবার খুবই সতর্কতার সঙ্গে গ্রহণের প্রয়োজন হয়, কিন্তু সেটা রোগের ধরন ও বিভিন্ন স্টেজের ওপর নির্ভর করে। একজন সি কে ডি রোগীর খাদ্য চাহিদা এবং একজন ডায়ালাইসিস রোগীর খাদ্য চাহিদা সম্পূর্ণ ভিন্ন কিন্তু সাধারণ মানুষ দুটোই কিডনির সমস্যা মনে করে খাবারের প্রতি অনেক কঠোর হয়ে যান অথবা একই রকম খাদ্য ব্যবস্থা বছরের পর বছর অনুসরণ করতে থাকেন। যার ফলে শারিরিক অবস্থার অবনতি হয়। তাই খাদ্য গ্রহণ আতঙ্কের বিষয় নয়, শুধু পরিমাণটা মুখ্য বিষয়।
কোনো খাবারই আতঙ্কের বিষয় হবে না যদি সেটি নির্দিষ্ট নিয়ম ও পরিমাণে খাওয়া হয়। ডিমকে একা দোষ না দিয়ে সব খাবার গ্রহণের পরিমাণের ওপর খেয়াল রাখুন। প্রতিদিন আপনার খাবার তালিকায় ১টি ডিম রাখুন। প্রয়োজনে একজন দক্ষ পুষ্টিবিদের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
লেখক :
সাজেদা কাশেম জ্যোতি
পুষ্টিবিদ, গণস্বাস্থ্য ডায়ালাইসিস সেন্টার, ধানমণ্ডি, ঢাকা, নির্বাহী পরিচালক, বিএডিএন