বয়সের সঙ্গে নারীদের জীবদ্দশায় শরীরের স্বাভাবিক হরমোনের তারতম্যের কারণে মুখগহ্বরে বেশ কিছু স্বল্প মেয়াদি পরিবর্তন আসে। সঠিক পরিচর্যার অভাবে এখান থেকে বড় ধরনের জটিলতার আশঙ্কাও রয়ে যায়। যেমন-

** মেনস্ট্রুয়েশন পিরিয়ড

পিরিয়ডের সময়ে রক্তে প্রোজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে মাড়ি উজ্জ্বল দেখায় ও ফুলে যায়, মাড়িতে ব্যথাসহ ছোট এপথাস আলসারসহ কিছু ঘা বা ক্ষত হতে পারে, লালা গ্রন্থি ফুলে যেতে পারে। মাসিকের ২ থেকে ৩ দিন আগে উপসর্গগুলো শুরু হলেও কয়েকদিনে ভালো হয়ে ওঠে।

** জন্মনিয়ন্ত্রক ওষুধ সেবন

প্রোজেস্টেরন সম্পর্কীয় ওষুধে মাড়িতে নানা ধরনের প্রদাহ দেখা দিতে পারে, বিশেষ করে ওষুধ নেওয়ার প্রথম কয়েক মাস। ইস্ট্রোজেন সম্পর্কীয় ওষুধ শরীরে প্রাকৃতিক ইস্ট্রোজেন কমিয়ে কৃত্রিম ইস্ট্রোজেন বাড়িয়ে দেয়, ফলে মুখের একমাত্র নড়াচড়াক্ষম জয়েন্ট, টেম্পেরোম্যান্ডিবুলার জয়েন্টে নানা সমস্যার কারণে মুখ খুলতে, খাবার চর্বণে এমনকি মুখ নাড়াচাড়া করতে কষ্ট হতে পারে।

** গর্ভকাল

গর্ভাবস্থায় হরমোনের ব্যাপক তারতম্য ঘটে, স্পর্শকাতর এ সময়ে প্রোজেস্টেরনের মাত্রা বেড়ে যাওয়াতে মুখের মধ্যকার জীবাণু সক্রিয় হয়ে ওঠে। গর্ভাবস্থার ২ থেকে ৮ মাসের মধ্যে দাঁতে গর্ত, দাঁত শিন শিন করা, মাড়ি ফুলে রক্ত পড়া বা প্রেগনেন্সি ইপিউলিস খুব সাধারণ। মুখ পরিষ্কারে অনিহা বা বমি বমি ভাবের জন্য মুখগহ্বর রোগের অভয়ারণ্য হয়ে ওঠে। অন্যদিকে মুখের রোগ থেকে অপরণীত গর্ভপাত ও গর্ভের শিশুর মানসিক ও শারীরিক জটিলতা হতে পারে। প্রথম ও শেষ তিন মাস চিকিৎসা গ্রহণেও সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন জরুরি।

** মেনোপজকাল

নারীদের মেনোপজে মুখে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা খুব সাধারণ। এর সঙ্গে যোগবাঁধে অন্যরোগ। মুখের স্বাদ কমে যাওয়া, মুখে জ্বালা পোড়া করা, অল্পতে ঝাঁল অনুভূতি, ঠান্ডা বা গরম খাবারে অতিসংবেদনশীলতা, মুখ শুষ্ক হয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে নানা পরিবর্তন হতে পারে। এসময়ে ক্যারিজ বা দাঁতক্ষয়, মাড়ি রোগ, চোয়ালের হাড় ক্ষয় থেকে নানা রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটতে পারে।

** করণীয়

* প্রত্যেকদিন নিয়ম মেনে সকালে নাশতার পর ও রাতে ঘুমানোর আগে নরম টুথ ব্রাশ ও ফ্লোরাইড যুক্ত টুথপেস্ট দিয়ে দাঁতের পাঁচটি পৃষ্ঠ পরিষ্কার, বিশেষ প্রয়োজনে জীবাণু ধ্বংসকারক মাউথ ওয়াশ ব্যবহার।

* দুই দাঁতের মধ্যবর্তী স্থানে ডেন্টাল ফ্লস দিয়ে পরিষ্কার।

* সমস্যা বা উপসর্গ না হলেও ছয়মাস পর পর অনুমোদিত ডেন্টাল চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া, যাতে রোগের প্রদুর্ভাব শুরুতেই ধরা পড়ে।

* স্বাস্থ্যবান্ধব খাবার গ্রহণ।

* গর্ভাবস্থায় চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে মুখ পরিষ্কার।

* মেনোপোজে গাইনি চিকিৎসকের পরামর্শে হরমোন থেরাপি।

 

লেখক :

ডা. মো. আসাফুজ্জোহা রাজ 

মহাসচিব, বিএফডিএস, রাজ ডেন্টাল সেন্টার, কলাবাগান।

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.