বিশ্বে ফ্যাটি লিভার এক বড় সমস্যা হয়ে উঠেছে। দেশেও প্রতি চারজনে একজন এ সমস্যায় আক্রান্ত। দুই রকমের ফ্যাটি লিভার ডিজিজ আছে—অ্যালকোহলজনিত ও নন-অ্যালকোহলিক। অ্যালকোহল বা মদ্যপানের কারণে হেপাটাইটিস পশ্চিমা বিশ্বে বেশি পরিচিত সমস্যা হলেও আমাদের দেশে দ্বিতীয় ধরনটিই বেশি।

লিভারের ৫ থেকে ১০ শতাংশের বেশি অংশে চর্বি জমা হলে তাকে ফ্যাটি লিভার বলে। এর অন্যতম কারণ, চাহিদার অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ, কায়িক শ্রমের অভাব, জিনগত প্রবণতা, ইনসুলিন অকার্যকারিতা, জীবনযাত্রার মন্দ অভ্যাস। টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ও স্থূলকায় ব্যক্তিরা রয়েছেন বেশি ঝুঁকিতে। মেটাবলিক সিনড্রোমের সঙ্গে জড়িত বলে আজকাল এ রোগকে মেটাবলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ বলা হয়।

বর্তমান বিশ্বে ন্যাশ বা নন-অ্যালকোহলিক স্টিয়াটো হেপাটাইটিস লিভার সিরোসিস ও ক্যানসারের অন্যতম প্রধান কারণ। তাই এ বিষয়ে সচেতনতা জরুরি।

ফ্যাটি লিভারের পরিণতি

নন-অ্যালকোহলিক বা মেটাবলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ রোগী ভবিষ্যতে নন-অ্যালকোহলিক স্টিয়াটো হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হতে পারেন। এতে লিভারের কোষগুলোয় প্রদাহ হয়, পরে ধ্বংস হতে থাকে এবং লিভার শক্ত হয় বা ফাইব্রোসিস হয়ে যায়। লিভারের বড় অংশ ফাইব্রোসিস হয়ে গেলে লিভার সিরোসিস হয়, যা প্রাণসংহারী।

কখন বুঝবেন ন্যাশ হচ্ছে

  • প্রথমত, কোনো উপসর্গ না-ও থাকতে পারে।
  • পেটের ডান দিকে ওপর পেটে অস্বস্তি।
  • ক্লান্তি ও দুর্বলতা।
  • অন্য কারণে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আকস্মিকভাবে ধরা পড়ে।

কীভাবে শনাক্ত করবেন

  • পেটের আলট্রাসনোগ্রাম করলে ফ্যাটি লিভার আছে কি না, বোঝা যায়। লিভারে ৫ থেকে ১০ শতাংশ চর্বি জমা হলে তাকে গ্রেড ১ ও ১০ থেকে ২৫ শতাংশ জমা হলে গ্রেড ২ এবং ৩০ শতাংশের বেশি থাকলে গ্রেড ৩ বলা হয়।
  • লিভার ফাংশন টেস্ট, যেমন এসজিপিটি ও এসজিওটি করতে হবে।
  • ফাইব্রোস্ক্যানের মাধ্যমে মাত্রা ও তীব্রতা নিখুঁতভাবে নির্ণয় করা হয়।
  • প্রয়োজনে লিভার বায়োপসি দরকার হতে পারে।

চিকিৎসা

ফ্যাটি লিভারের কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। জীবনযাত্রার ইতিবাচক পরিবর্তনই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এ ক্ষেত্রে যা করা দরকার:

  • ওজন কমানো ও আদর্শ ওজন বজায় রাখা।
  • রোজ অন্তত ৩০ মিনিট জোরে হাঁটা বা ব্যায়াম করা।
  • ট্রাইগ্লিসারাইড ও এলডিএল কোলেস্টেরল সহনীয় মাত্রায় নামানো।
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা।
  • ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার।

খাদ্যাভ্যাস

  • শর্করাজাতীয় খাবার, যেমন সাদা ভাত, ময়দার তৈরি খাবার, পাউরুটি, আলু কম খেতে হবে।
  • শাকসবজি, তাজা ফলমূল বেশি খেতে হবে।
  • পর্যাপ্ত মাছ খাওয়া ভালো, বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছ।
  • জটিল শর্করা, যেমন লাল আটা, ওটস, যবের আটা ভালো।
  • এড়িয়ে চলুন চিনি, ভাজাপোড়া, ফ্রাই করা খাবার, ফাস্ট ফুড, লবণ ও লবণাক্ত খাবার, লাল মাংস, কোমল পানীয়, চকলেট, আইসক্রিম, পেস্ট্রি ইত্যাদি।

 

এ কে এম মুসা

সাবেক অধ্যাপকমেডিসিন বিভাগবারডেম হাসপাতাল

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.