আমাদের গলায় থাইরয়েড গ্রন্থির চার প্রান্তে আছে আরও চারটি ছোট ছোট গ্রন্থি। এগুলোর নাম প্যারাথাইরয়েড গ্ল্যান্ড (প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থি)। এগুলো খুবই ছোট ও থাইরয়েডের গায়ের সঙ্গে লেগে থাকে, কিন্তু গ্রন্থিগুলো থেকে তৈরি হয় গুরুত্বপূর্ণ একটি হরমোন—প্যারাথাইরয়েড হরমোন।

প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থি কী করে

প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থি থেকে যে হরমোন তৈরি হয়, তার কাজ অন্ত্রে ক্যালসিয়ামের শোষণ বাড়ানো ও একই সঙ্গে কিডনির মাধ্যমে ক্যালসিয়াম বহির্গমনের নিয়ন্ত্রণ। আমাদের শরীরের জন্য ক্যালসিয়াম খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি খনিজ। ৯৯ শতাংশ ক্যালসিয়াম হাড়ে সঞ্চিত থাকে এবং ১ শতাংশ রক্তে পাওয়া যায়। কিন্তু এই ১ শতাংশই পেশি, হৃদ্‌যন্ত্র বা স্নায়ুর কার্যকারিতার জন্য প্রয়োজনীয়। তাই রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা ঠিক রাখা খুব জরুরি।

প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থিতে যে সমস্যা হতে পারে

আর সব গ্রন্থির মতো প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থিরও মূলত দুই ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এক, হরমোন বেশি তৈরি করা। দুই, হরমোন কমে যাওয়া। যদি হরমোন বেশি তৈরি হয়, তবে রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা বাড়তে পারে। রক্তে ক্যালসিয়াম ১২ মিলিমোল পার লিটারের বেশি হওয়া বিপজ্জনক। এ কারণে হাড়ে ব্যথা, মাথাব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য, পেটব্যথা, বমি ইত্যাদির পাশাপাশি হৃৎস্পন্দনে সমস্যা হয়ে মৃত্যুও হতে পারে। হতে পারে কিডনিসহ বিভিন্ন অঙ্গে পাথর।

রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা অস্বাভাবিক বেড়ে গেলে প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থির স্ক্যান করতে হবে। এতে টিউমার পাওয়া যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে টিউমার অপসারণ করাই চিকিৎসা। আবার কিডনি ফেইলিউর, ভিটামিন ডি–এর অভাবসহ বেশ কিছু কারণে প্যারাথাইরয়েড হরমোন সামান্য বাড়তে পারে। এখানে আগে মূল রোগের চিকিৎসা করতে হবে।

এদিকে হরমোন কমে যাওয়ার ঘটনা একটু বিরল। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে থাইরয়েড গ্রন্থি অপসারণ করতে গিয়ে প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থির ইনজুরি বা অপসারণ ঘটলে এমনটা হয়। এতে রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা বিপজ্জনকভাবে কমে খিঁচুনি, টিটানি ইত্যাদি হতে পারে।

করণীয়

● বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা শনাক্ত হয় কোনো কারণে রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা দেখতে গিয়ে। ক্যালসিয়ামের মাত্রা অতিরিক্ত কম বা বেশি হলে দ্রুত একজন হরমোন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। ক্যালসিয়ামের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ভিটামিন ডি ও ফসফরাস খনিজের। সম্পর্ক আছে কিডনির কার্যকারিতার সঙ্গেও। সেই সঙ্গে রক্তে অ্যালবুমিন বা আমিষের মাত্রা ক্যালসিয়ামের মাত্রার সঙ্গে জড়িত। তাই এগুলোও দেখতে হবে।

● প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা চিহ্নিত করতে বিশেষ ধরনের স্ক্যান করতে হয়। স্ক্যানে টিউমার ধরা পড়লে তা বিশেষজ্ঞ সার্জনের সাহায্যে অপসারণ করাই মূল চিকিৎসা।

● বেশির ভাগ প্যারাথাইরয়েড টিউমার বিনাইন বা নিরীহ; ক্যানসার নয়। তবে টিউমার অপসারণের পর ক্যালসিয়ামের মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে এবং ফলোআপে থাকতে হবে।

 

ডা. তানজিনা হোসেন

সহযোগী অধ্যাপকএন্ডোক্রাইনোলজি ও মেটাবলিজম বিভাগগ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.