আপনার সন্তানের ডান নাক দিয়ে অবিরত রক্ত ঝরছে। অথচ আঘাতের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। কয়েক মিনিট নাক চেপে ধরেও রক্তপাত বন্ধ হলো না। বাধ্য হয়ে গেলেন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে। সেখানে চিকিৎসকেরা অস্ত্রোপচারকক্ষে নিয়ে গিয়ে দুই নাকে প্যাক দিয়ে দিলেন, সঙ্গে ওষুধপত্র।
নাক দিয়ে হঠাৎ রক্ত পড়া একটা ভয়ের ব্যাপার বটে। এর পেছনে লুক্কায়িত আছে নাক অথবা অন্য কোনো রোগের বহিঃপ্রকাশের বিষয়টি।
কারণ: শতকরা ৮০ থেকে ৯০ ভাগ রোগীর ক্ষেত্রে নাক দিয়ে রক্তপাত হওয়ার কারণ জানা যায় না।
সাধারণ কারণের মধ্যে রয়েছে:
কোনো কারণে নাকে আঘাত পাওয়া বা মাথায় আঘাত (হেড ইনজুরি);
নাকে কোনো কিছু ঢুকে যাওয়া;
নাকে প্রদাহ বা ইনফেকশন;
নাকের ভেতরে পলিপ;
অনেক সময় নাকের হাড় বাঁকা থাকলে;
নাকে ফাংগাল ইনফেকশন;
নাকের টিউমার বা ক্যানসার;
সাইনাসের বিভিন্ন রোগের কারণেও রক্তপাত হতে পারে;
শীতপ্রধান দেশ ও এয়ার কন্ডিশনড করা কক্ষে কারও কারও নাক শুকিয়ে গিয়ে রক্তপাত হতে পারে;
নাকের সমস্যা ছাড়া বিভিন্ন সাধারণ রোগেও নাক দিয়ে রক্তপাত হতে পারে। যেমন: অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ, বিভিন্ন ধরনের রক্তরোগ কিছু ওষুধের কারণেও রক্তপাত হতে পারে। যেমন: অ্যাস্পিরিন বা অন্যান্য রক্ত জমাট বাঁধতে দেয় না, এমন ওষুধ; জš§গত রোগেও নাক দিয়ে রক্ত পড়তে পারে।
নাক দিয়ে রক্তপাত যেকোনো বয়সে হতে পারে। সাধারণত বয়স্ক ব্যক্তিদের উচ্চ রক্তচাপ, টিউমার, অথবা ক্যানসার হলে নাক দিয়ে রক্তপাত হয়ে থাকে।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসা: প্রথমত, রোগী ও পরিবারের সদস্যদের রোগ সম্পর্কে বোঝাতে হবে এবং ভালোভাবে নাক পরীক্ষা করতে হবে। নাক দিয়ে রক্তপাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। যেমন: নাক বা সাইনাসের এক্স-রে, নাকের এন্ডোস্কপি, রক্ত পরীক্ষা, প্রয়োজনে সিটি স্ক্যান, এমআরআই ও অন্যান্য পরীক্ষা।
করণীয়: প্রাথমিক পর্যায়ে বাসায় ১০ মিনিট নাক চেপে ধরলে সাধারণত রক্তপাত বন্ধ হয়ে যায়। এরপরও যদি রক্তপাত বন্ধ না হলে রোগীকে দ্রুত নিকটবর্তী কোনো হাসপাতালে অথবা নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যেতে হবে। চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে কটারি বা নাকে প্যাক দেয়া। দক্ষ চিকিৎসকের মাধ্যমে নাকে প্যাক দিলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রক্তপাত বন্ধ হয়ে যায়।
অধ্যাপক ডা. এম আলমগীর চৌধুরী
বিভাগীয় প্রধান, ইএনটি বিভাগ
আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ধানমন্ডি, ঢাকা