হাঁটা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, এটা আমরা সবাই জানি। ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল, হার্টের বিভিন্ন সমস্যায় হাঁটার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। আবার অনেক সচেতন মানুষ নিয়মিত হেঁটে থাকেন এ ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি প্রতিরোধ করার জন্য। কিন্তু অনেকেই জানেন না, সে সময়টুকু অন্তত কত হলে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

কত সময় হাঁটবেন

কেউ কেউ হাঁটার হিসাব করেন সময় হিসাবে। যেমন ১৫ থেকে ২০ মিনিট। আবার কেউ কেউ দূরত্ব দিয়ে—যেমন দেড় থেকে দুই কিলোমিটার। এ হিসাবটি নির্দিষ্ট থাকা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। তাহলে একটি নিয়মের মধ্যে জীবন যাপন করা সহজ হয়।

প্রথমত মনে রাখতে হবে, হাঁটার একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। তবে সেটি সবার ক্ষেত্রে এক হওয়া উচিত নয়। সেটি ঠিক করতে হবে মানুষটির জীবনযাত্রার মান, ধরন ও ফিটনেস লেভেল অনুযায়ী।

আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন ও সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) গাইডলাইন অনুযায়ী সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট ভালোভাবে হাঁটা উচিত।

প্রাথমিকভাবে সপ্তাহের অন্তত চার দিন ৩০ মিনিট করে হাঁটতে হবে। প্রয়োজন ও সক্ষমতার সঙ্গে সঙ্গে বাড়াতে হবে। সাধারণভাবে যত বেশি হাঁটা যাবে, তত বেশি এর উপকারিতা পাওয়া যাবে। এটাই মনে করেন গবেষক ও চিকিৎসকেরা। সেই হিসেবে আপনি দিনে ১০ হাজার কদম হাঁটতে পারেন।

যে ১০টি সহজলভ্য খাবার কমাবে মানসিক চাপ

কীভাবে হাঁটবেন

প্রথমেই কঠোরভাবে হাঁটা বা ব্যায়াম শুরু করা উচিত নয়। প্রাথমিকভাবে দৈনিক ২০-৩০ মিনিট হালকাভাবে হাঁটা শুরু করা উচিত।

পরে শারীরিক সক্ষমতা বাড়লে সেটিকে ধীরে ধীরে বাড়াতে হবে। শুরুতেই কঠোরভাবে হাঁটলে ব্যথা, ইনজুরি হতে পারে। অল্পতেই হাঁপিয়ে যেতে পারেন। এমনকি হার্টে সমস্যা থাকলে ঝুঁকি বাড়তে পারে। সুতরাং ধৈর্যের সঙ্গে ধীরে ধীরে শারীরিক সক্ষমতার উন্নতি বুঝে হাঁটার সময় ও দূরত্ব বাড়াতে হবে। তবে একদম ধীরে হাঁটা খুব একটা কার্যকর হয় না। যে রকম হাঁটায় ঘাম হয় ও হার্টরেট কিছুটা বাড়ে—সে রকমভাবে হাঁটতে হবে। যাঁরা আগে থেকেই হাঁটেন, তাঁদের ক্ষেত্রে হাঁটার লক্ষ্য ভিন্ন হওয়া উচিত। তাঁরা ধীরে ধীরে তাঁদের লক্ষ্য বাড়াতে পারেন।

আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের মতে, সপ্তাহে ৩০০ মিনিট পর্যন্ত হাঁটার লক্ষ্য নির্ধারণ করা যাবে। তবে মনে রাখতে হবে, জোর করে বা ঝুঁকি নিয়ে লক্ষ্য বাড়ানো উচিত নয়।

হাঁটার অভ্যাসকে আনন্দময় করা জরুরি। জোর করে কোনো কিছুই ভালো হয় না। ছোট ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ করে, আস্তে আস্তে লক্ষ্য বাড়াতে হবে। কেউ কেউ অল্প লক্ষ্য অর্জনেই আনন্দিত হন। আবার কেউ কঠোর লক্ষ্য অর্জন না করা পর্যন্ত সন্তুষ্ট হন না। যে যেটাই করুন না কেন, সেটা যেন শরীরের জন্য উপযোগী আর উপকারী হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

 

লেখক:

ডা. সাইফ হোসেন খান

মেডিসিন কনসালট্যান্ট, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ধানমন্ডি

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.