দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়ার কারণ দুটি একটিকে বলা যায় দাঁতের নিজস্ব বা স্থানীয় কারণ। দ্বিতীয়টি হয় শরীরের অন্য কোনো রোগের কারণে।

রক্তের ক্যানসার (লিউকেমিয়া), যকৃতের রোগ, রক্তের প্লাটিলেট কমে যাওয়া (ডেঙ্গু রোগে), রক্ত পাতলা করার ওষুধ সেবন (যেমন অ্যাসপিরিন, ডিসপ্রিন, ক্লোপিডগ্রেল) করলে অন্যান্য জায়গার মতো মাড়িতেও রক্তপাত হতে পারে। গর্ভাবস্থায় হরমোনের তারতম্যের কারণে মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ হয়। সুতরাং মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণকে সহজভাবে দেখলে চলবে না।

লক্ষণ: মাড়ির প্রদাহের প্রথম লক্ষণ হচ্ছে মাড়ি লাল হওয়া ও ফুলে যাওয়া, মাড়ি থেকে দাঁতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া, দাঁত ব্রাশ করলে বা শক্ত কোনো খাবার চিবিয়ে খেলে রক্ত বের হওয়া। অনেক ক্ষেত্রে ঘুম থেকে উঠলে মুখে রক্ত দেখা যায়। অনেক সময় লালার সঙ্গে রক্ত মিশে বিছানার বালিশেও রক্ত দেখা যায়।

চিকিৎসা: ডেন্টাল প্লাক পরিষ্কার করার বিজ্ঞানসম্মত উপায় হচ্ছে ডেন্টাল স্কেলিং। আজকাল আধুনিক আলট্রাসনিক স্কেলার যন্ত্রের মাধ্যমে সহজেই দাঁতে লেগে থাকা ডেন্টাল প্লাক বা শক্ত আবরণ সরানো যায়। প্রদাহের কারণে মাড়ি ফুলে গেলে উপযুক্ত অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগের পর মাড়ির শল্যচিকিৎসা লাগতে পারে, যাকে বলা হয় জিনজিভেকটমি।

মাড়ির রক্তক্ষরণ প্রতিরোধে প্রতিদিন সকালে নাশতায় পর ও রাতে আহারের পর দাঁত ব্রাশ করা উচিত। তা ছাড়া প্রতিদিন ভিটামিন সি-জাতীয় ফল, যেমন কমলালেবু, জাম্বুরা, কামরাঙা, আমলকী, আমড়া, কলা, মাল্টা এবং গাজর, টমেটো, শসা, লেবুর রস প্রভৃতি দিয়ে সালাদ খাওয়া। ধূমপান বা তামাকজাতীয় খাদ্য বর্জন ও ডায়াবেটিস থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।

দাঁতের ও মাড়ির প্রকৃতি অনুযায়ী টুথব্রাশ ব্যবহার করা প্রয়োজন। যেমন নরম, মাধ্যম ও শক্ত ধরনের টুথব্রাশ। গ্রহণযোগ্য পেস্ট হচ্ছে ফ্লোরাইডযুক্ত টুথপেস্ট। ফ্লোরাইড দাঁতের দন্তক্ষয় রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।

দাঁত ব্রাশের পর ডেন্টাল ফ্লসের সাহায্যে দুই দাঁতের ফাঁক থেকে ময়লা দূর করতে হবে। তারপর একটি মাউথওয়াশ বা অল্প গরম লবণপানি দিয়ে কুলিকুচি করতে হবে। তবেই মাড়ি ও দাঁত পরিষ্কার থাকবে, সুস্থ থাকবে।

 

অধ্যাপক ডা. অরূপরতন চৌধুরী

বারডেম, ইব্রাহীম মেডিকেল কলেজ

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.