থ্যালাসেমিয়া একধরনের রক্তরোগ, যা বংশগতভাবে প্রবাহিত হয়। আমরা জানি, হিমোগ্লোবিন রক্তের খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা উৎপন্ন হয় দুটি আলফা ও দুটি বিটা প্রোটিন দিয়ে। সাধারণত জিনগত ত্রুটির কারণে এ প্রোটিনগুলোর উৎপাদন কমে গেলে হিমোগ্লোবিনের উৎপাদন অস্বাভাবিক হয়, রক্তের লোহিতকণা ভাঙতে থাকে এবং থ্যালাসেমিয়া রোগ দেখা দেয়। আর এ ত্রুটিপূর্ণ জিন বংশানুক্রমে মা-বাবা থেকে সন্তানের মধ্যে সংক্রমিত হয়।

সংক্রমণ: যদি মা-বাবার কেউ থ্যালাসেমিয়ার বাহক না হন, তবে সন্তানের থ্যালাসেমিয়া হওয়ার আশঙ্কা নেই।

মা-বাবার কেউ একজন বাহক হলে ৫০ শতাংশ আশঙ্কা থাকে সন্তানের বাহক হওয়ার। যদি মা-বাবা দুজনই বাহক হন, সে ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ আশঙ্কা থাকে সন্তানের থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জš§গ্রহণের, ৫০ শতাংশ আশঙ্কা থাকে বাহক হওয়ার, আর বাকি ২৫ শতাংশ সম্ভাবনা থাকে সম্পূর্ণ সুস্থ হিসেবে জš§গ্রহণ করার।

করণীয়: থ্যালাসেমিয়ার বাহক আর থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত হওয়া দুটি আলাদা বিষয়। যিনি থ্যালাসেমিয়ার বাহক তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ, শুধু থ্যালাসেমিয়ার জিন বহন করেন শরীরে। আগে চিহ্নিত করে দুজন থ্যালাসেমিয়া বাহকের মধ্যে বিয়ে বন্ধ করতে পারলে পরবর্তী প্রজšে§ থ্যালাসেমিয়া রোগের ঝুঁকি কমানো যায়। থ্যালাসেমিয়ার বাহকসংখ্যা নেহাত কম নয় আমাদের দেশে। এ নিয়ে ব্যাপক সচেতনতা দরকার। কেউ বাহক হিসেবে চিহ্নিত হলে তার বিয়ের আগে অবশ্যই হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রোফরেসিস পরীক্ষায় জেনে নিতে হবে হবু স্বামী বা স্ত্রীও বাহক কি না। কারণ দুজনই বাহক হলে অনাগত সন্তানদের থ্যালাসেমিয়া হতে পারে। আমাদের দেশের সামাজিক পরিপ্রেক্ষিতে বিয়ের সময় হলে পাত্র বা পাত্রীপক্ষকে রক্ত পরীক্ষার কথা বলা যায় না। বেশিরভাগ বাহক সন্তানের বাবা-মা ব্যাপারটা গোপন রাখেন। ফলে রোগীর সংখ্যাও বাড়তে থাকে। অথচ একজন বাহক একজন সুস্থ মানুষকে নিশ্চিন্তে বিয়ে করতে পারেন।

এসব বিষয়ে আজও আমাদের মধ্যে কুসংস্কার ও গোঁড়ামি ব্যাপকভাবে প্রচলিত আছে। সরকার যদি আইনের মাধ্যমে বাধ্যতামূলক করে দেয় যে বিয়ের আগে ছেলেমেয়ের হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রোফরেসিস পরীক্ষা করতে হবে, তবে ব্যাপারটা অনেক সহজ হবে।

 

ডা. শামীমা শারমীন

শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, শিশুরোগ বিভাগ, আলোক হেলথকেয়ার লিমিটেড

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.