ত্বকের ওপর অনেক সময় ফোসকা বা ফুসকুড়ি দেখা যায়। ফোসকার ভেতর সাধারণত পরিষ্কার তরল (সিরাম), কখনো রক্ত বা পুঁজ থাকে। নানা কারণে ত্বকে ফোসকা পড়তে পারে। কারণের ওপর নির্ভর করে ফোসকার ধরন ও উপসর্গ ভিন্ন হয়ে থাকে।

যদি প্রদাহের কারণে ফোসকা পড়ে, তবে সাধারণত ব্যথা ও লালচে ভাব দেখা যায়, যেমন ভুল মাপের জুতা পরায় আঘাত, পুড়ে যাওয়া, যেকোনো ইনজুরি ইত্যাদি। পুড়ে যাওয়ার কারণে ফোসকা হলে এবং অটোইমিউন রোগ এপিডা‌র্মোলাইসিস বু‌ল্লোসা হলে চামড়া উঠে যেতে দেখা যায়। ভাইরাসের সংক্রমণে জ্বর এলে ঠোঁটের কাছে প্রায়ই অনেকের ফোসকা পড়ে।

আবার একজিমার কারণে যে ফোসকা হয়, তাতে খুব চুলকানি হয়ে থাকে। রোদে পোড়ার কারণে যে ফোসকা হয়, তাতে চামড়ার ওপর বলিরেখা ও তামাটে ভাব দেখা দেয়। হারপিস জোস্টার, চিকেন পক্স ইত্যাদিতে ফোসকায় জ্বালাযন্ত্রণা হয় এবং এর সঙ্গে একটি খোসা দেখা দেয়, যা পরে খসে পড়ে।

উপসর্গের ইতিহাস, ফোসকার ধরন ও বিভিন্ন পরীক্ষা ফোসকা পড়ার কারণ নির্ণয় করতে সাহায্য করে। ফোসকার অবস্থান (শরীরের এক পাশে, নাকি নির্দিষ্ট কোনো জায়গায়, না পুরো শরীরে), উপসর্গের ইতিহাস (ব্যথা, চুলকানি, জ্বর, আঘাত পাওয়া বা পুড়ে যাওয়া) ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ। রক্তের সিবিসি পরীক্ষা, আইজিই লেভেল অ্যালার্জি শনাক্তকরণে এবং আইজিজি, আইজিএম ও অন্যান্য উন্নত পরীক্ষা অটোইমিউন রোগ নির্ণয়ে সহায়তা করে।

ফোসকা থেকে নেওয়া তরলের নমুনায় থাকা ব্যাকটেরিয়া পর্যবেক্ষণ করে সঠিক অ্যান্টিবায়োটিক শনাক্ত করা হয়। কখনো ফোসকার কারণ ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের জীবাণুকে শনাক্ত করতে পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন বা পিসিআর করা হয়। ত্বকের বায়োপসি দরকার হতে পারে কখনো। বংশগত সমস্যাগুলো শনাক্ত করতে জিনগত পরীক্ষা করা হয়।

চিকিৎসা

  • অনেক ফোসকা সাধারণত ওষুধ ছাড়া নিজে থেকেই ভালো হয়ে যায়। যেসব পরিস্থিতিতে ওষুধ ব্যবহার করা হয়, তা হলো, ফোসকা পুঁজপূর্ণ হলে, ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থাকলে, অ্যালার্জি, আলোকসংবেদনশীল অথবা পুড়ে যাওয়ার কারণে ফোসকা মারাত্মক আকার ধারণ করলে, মুখের ভেতর বা অন্য কোনো অস্বাভাবিক জায়গায় ফোসকা হলে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়।
  • চিকেন পক্স, হারপিস জোস্টার বা জ্বর ফোসকার জন্য অ্যান্টিভাইরাল দেওয়া যায়।
  • কর্টিকোস্টেরয়েডস ও ইমিউনিটি মডিউলেটিং ওষুধ অটোইমিউন রোগের কারণে হওয়া ফোসকায় ব্যবহৃত হয়।
  • প্রদাহনাশক ওষুধ ব্যথা কমাতে ব্যবহার করা হয়। অ্যালার্জিরোধী ওষুধ চুলকানি কমাতে ব্যবহার করা হয়।
  • ফোসকার অবস্থা মারাত্মক হলে এবং ত্বকে বিকৃতি সৃষ্টি হলে অস্ত্রোপচার ও ত্বক গ্রাফটিং করা প্রয়োজন; বিশেষত অটোইমিউন রোগের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য।

সতর্কতা

  • নিজে নিজে কোনো ফোসকা ফাটানো, সুই দিয়ে ছিদ্র করা ঠিক নয়। এতে সংক্রমণ হতে পারে।
  • ফোসকা নিজে ফেটে তরল বের হয়ে গেলে এটিকে নরম ড্রেসিং বা আবরণ দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
  • ডা. দিদারুল আহসান
  • চর্ম, অ্যালার্জি ও যৌনরোগবিশেষজ্ঞ এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক, আল-রাজী হাসপাতাল, ফার্মগেট, ঢাকা

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.