তীব্র তাপপ্রবাহে অধিকাংশ মানুষই নানা শারীরিক সমস্যায় পড়তে পারেন। অন্তঃসত্ত্বা নারীদের ক্ষেত্রে সমস্যা আরও বেশি হতে পারে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, শারীরবৃত্তীয় কারণে গর্ভবতী নারীরা উচ্চ তাপমাত্রার প্রতি অতিরিক্ত সংবেদনশীল থাকেন। অন্তঃসত্ত্বা নারীর স্বাস্থ্যঝুঁকির পাশাপাশি ঝুঁকিতে থাকে গর্ভস্থ সন্তানও। তাই তাপপ্রবাহ মোকাবিলায় গর্ভবতী নারীদের নিজের ও স্বজনদের সতর্ক থাকতে হবে; নিতে হবে বিশেষ যত্ন।

প্রচুর তরল দরকার

গরমে সুস্থ থাকতে প্রচুর তরল বা তরলজাতীয় খাবার খেতে হবে। অন্তঃসত্ত্বা নারীদের এই গরমে অন্তত দুই থেকে তিন লিটার পানি পান করতে হবে। সেই সঙ্গে প্রয়োজনমতো খাওয়ার স্যালাইন, ডাবের পানি, লেবুপানি, টক দই, তরমুজ বা শসার মতো ফলমূল খাওয়া দরকার।

খাবার বাছাইয়ে সচেতনতা

অল্প অল্প করে বারবার খেতে হবে। গরমে বাসি, খোলা বা বাইরের খাবার না খাওয়াই ভালো। বাড়িতে তৈরি হালকা মসলার সহজপাচ্য খাবার অন্তঃসত্ত্বা নারীর জন্য আদর্শ।

চা, কফি ইত্যাদি ক্যাফেইন–জাতীয় খাবার হৃৎস্পন্দন ও দেহের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। সুতরাং এসব এড়িয়ে চলা উচিত।

পানিশূন্যতা যেন না হয়

অন্তঃসত্ত্বা নারীদের ঘাম বেশি হওয়ার কারণে পানিশূন্যতা বেশি হতে পারে। ঠোঁট–জিব শুকিয়ে এলে, প্রস্রাবের পরিমাণ কমলে ও রং গাঢ় হলে এবং শরীর অবসন্ন লাগলে বুঝতে হবে, শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়ছে। এ জন্য পর্যাপ্ত পানি পান, অতিরিক্ত গরম বা বদ্ধ জায়গায় দীর্ঘক্ষণ না থাকা, রোদে কম যাওয়া ইত্যাদি মেনে চলতে হবে। দীর্ঘক্ষণ ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম উচিত নয়। তবে চিকিৎসকের পরামর্শে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় বা ঘরে হালকা ব্যায়াম বা হাঁটাচলা চালিয়ে যেতে হবে।

আরামদায়ক পোশাক

গরমে অন্তঃসত্ত্বা নারীর পোশাক হতে হবে আরামদায়ক সুতি কাপড়ের, পাতলা ও ঢিলেঢালা। গরমে ঘামাচি, চুলকানি ও অ্যালার্জির ঝুঁকি থাকে। তাই বারবার ঠান্ডা পানিতে হাতমুখ ধোয়া ভালো। প্রয়োজনে প্রতিদিন একাধিকবার স্বাভাবিক তাপমাত্রায় গোসল করা যেতে পারে। বাইরে গেলে ছাতা, সানগ্লাস ইত্যাদি ব্যবহার করা উচিত।

পর্যাপ্ত ঘুম

গরমে ঘুমের সমস্যা হতে পারে। পর্যাপ্ত ঘুম বা বিশ্রাম না হলে তাতে নিজের বা গর্ভস্থ শিশুর ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই পর্যাপ্ত ঘুম বা বিশ্রাম নিশ্চিত করা দরকার।

কখনো কখনো সব নির্দেশনা মেনে চললেও নানা শারীরিক সমস্যা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।

  • ডা. শাহনুর শারমিন
  • সহযোগী অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.