কনুইয়ের অস্থিসন্ধিতে ব্যথা ও প্রদাহজনিত রোগ হচ্ছে টেনিস এলবো। কনুইয়ের বাইরের দিকের হিউমেরাস হাড়ের ল্যাটারাল এপিকন্ডাইলে মাংসপেশির টেনডন বা রগে এই প্রদাহ হয়। এর আরেক নাম ‘ল্যাটারাল এপিকন্ডাইলাইটিস’।

কেন হয় টেনিস এলবো

বাহুর অতিব্যবহারের (যেমন ক্রিকেট বা ব্যাডমিন্টন খেলা, রান্না, ভারী কিছু ওঠানো ইত্যাদি) কারণে টেনিস এলবো হতে পারে। ধারণা করা হতো, টেনিস খেলোয়াড়দের এটি বেশি হয়। সে জন্যই নাম দেওয়া হয় টেনিস এলবো। টেনিস ছাড়াও ক্রিকেটার, ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় এবং যাঁরা বাহুর অতিব্যবহার করেন, তাঁদের এই রোগ বেশি হয়।

আমাদের দেহের মাংসপেশিগুলো রগ বা টেনডনের সাহায্যে হাড়ের সঙ্গে যুক্ত। দেহের কোনো অংশ বারবার একই কাজ করতে থাকলে টেনডনের ওপর চাপ পড়ে ব্যথা ও প্রদাহের সৃষ্টি হয়।

টেনিস এলবোর সঙ্গে মিল আছে, এমন অন্যান্য রোগ হলো সারভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিস, মেডিয়াল এপিকন্ডাইলাইটিস, বাইসেপ টেনডিনাইটিস ইত্যাদি। সঠিকভাবে শনাক্ত করতে হলে লক্ষণগুলো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। লক্ষণের মধ্যে রয়েছে কনুইয়ের বাইরের দিকে মৃদু থেকে তীব্র ব্যথা, কনুইয়ের বাইরে থেকে বাহু ও কবজি পর্যন্ত ব্যথা, করমর্দন বা কোনো বস্তু ওঠাতে গেলে ব্যথা অনুভূত হওয়া।

টেনিস এলবো চিকিৎসকের কাছে গিয়ে পরীক্ষা করলেই ধরা যায়, তেমন কোনো ল্যাবরেটরি পরীক্ষার দরকার পড়ে না। কনুইয়ের বাইরের দিকে ফুলে যেতে বা লাল হতে পারে। কনুইয়ে চাপ দিলে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। চূড়ান্ত পর্যায়ে ব্যথা সব সময় অথবা বাহু সোজা করলেই হতে পারে। কোজেন সাইন পজিটিভ হয়। মূলত অন্য রোগ থেকে আলাদা করতে ল্যাবরেটরি টেস্ট করা হয়ে থাকে। যেমন রক্ত পরীক্ষা (সিবিসি, সিআরপি), কনুইয়ের এক্স-রে, এমআরআই, ডায়াগনস্টিক আলট্রাসাউন্ড ইত্যাদি।

চিকিৎসা

টেনিস এলবোর চিকিৎসায় অস্ত্রোপচার খুব একটা লাগে না। মূলত রোগ সম্পর্কে রোগীকে সম্যক ধারণা দেওয়া জরুরি। এ রোগ হলে কী করা যাবে, কী করা যাবে না, তা রোগীকে ভালোভাবে বুঝিয়ে দেওয়া। তীব্র ব্যথার সময় বাহুকে বিশ্রাম দেওয়া। লাল হলে বা ফুলে গেলে ১০ থেকে ১৫ মিনিট করে দিনে তিন থেকে চারবার বরফ লাগানো ভালো। ব্যথানাশক ওষুধ, ইন্ট্রালেশনাল স্টেরয়েড ইনজেকশন ব্যবহার করা যায়। কোনো ধরনের মালিশ করা যাবে না।

দীর্ঘমেয়াদি ব্যথার ক্ষেত্রে আলট্রাসাউন্ড থেরাপি, নির্দিষ্ট কিছু ব্যায়াম, ম্যাসাজ থেরাপি, টেনিস এলবো ব্রেস ও পিআরপি থেরাপি ব্যবহার করা হয়। ৬ থেকে ১২ মাসের মধ্যে কোনো ফল না এলে অপারেটিভ চিকিৎসা দরকার হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ‘ল্যাটারাল এপি কন্ডাইল রিলিজ’ হলো প্রচলিত একটি অস্ত্রোপচারের পদ্ধতি। জটিলতা হলো, অস্ত্রোপচারের পর বাহু সম্পূর্ণ সোজা না–ও হতে পারে। অস্ত্রোপচারের পরও ব্যথা থাকতে পারে, স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি হতে পারে।

প্রতিকার

এ ধরনের রোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে প্রথমেই জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনাসহ প্রতিদিন কিছু ব্যায়াম করা জরুরি।

 

ডা. দিলীর জামাল

সহকারী অধ্যাপক, ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগ, জাতীয় ইএনটি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.