মানচিত্রের মতো জিব বা জিওগ্রাফিক টাং জিবের প্রদাহ বা ঘায়ের কারণে হয়ে থাকে। শিশুদের বেলায় রোগটি শূন্য দশমিক ৩৭ থেকে ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ ক্ষেত্রে পাওয়া যায়।
জিবে অনেক কারণেই ঘা হতে পারে। যেমন ফাঙ্গাস বা ছত্রাক সংক্রমণ, ভিটামিনের ঘাটতি, মুখগহ্বরের অযত্ন ইত্যাদি। তবে এই জিওগ্রাফিক টাং সহজে ভালো হতে চায় না। তাই শিশুদের নিয়ে বাবা-মায়েরা চিন্তিত থাকেন এবং ঘন ঘন চিকিৎসক পরিবর্তন করেন। এটা অভিভাবকদের কাছে যথেষ্ট উদ্বেগজনক। তবে মনে রাখবেন, এটি বড় কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করে না। এই রোগ সংক্রমণ বা ক্যানসারের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। এটি দিন, মাস বা বছর ধরেই থাকতে পারে। সমস্যা নিজে নিজেই চলে যায়, কিন্তু পরে আবার দেখা দিতে পারে।
কারণ
এখন পর্যন্ত প্রধান কারণ অজানা। তবে ধারণা করা হয়, কিছু কিছু বিষয় এই রোগের জন্য দায়ী। যেমন
১. জিনগত কারণে। পরিবারের অন্য সদস্যদের এই রোগের ইতিহাস থাকতে পারে।
২. পরিবেশগত সংবেদনশীলতার কারণে কারও কারও হতে পারে।
৩. শিশুদের হাঁপানি বা একজিমা অথবা অ্যালার্জির প্রবণতা।
৪. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ঘাটতি।
৫. খাদ্য উপাদানের ঘাটতি। যেমন ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, জিংক, আয়রনের অভাব।
লক্ষণ
জিবে এক বা একাধিক ঘা দেখা দেয়। স্বাভাবিকভাবে আমাদের জিবে একধরনের গোলাপি সাদা আবরণ থাকে, যাকে প্যাপিলা বলা হয়। জিওগ্রাফিক টাংয়ে এই প্যাপিলা অনুপস্থিত থাকে। ঘা এর সীমানাগুলো এতটা এলোমেলো অবস্থায় থাকে যে দেখে মনে হয়, এটা একটা দেশের মানচিত্র। এই মানচিত্রের ভেতরটা থাকে লাল; সীমানাগুলো হলুদ-সাদা রঙের এবং কিছুটা উঁচু উঁচু। ঘা একটা ভালো হয়ে গেলে নতুন করে আরেকটা দেখা দেয় বা একসঙ্গে অনেকগুলো দেখা দেয়। কখনো কখনো জিবে ব্যথা হতে পারে এবং খাবারের প্রতি সংবেদনশীল করে তুলতে পারে। যেমন মসলা, লবণ, এমনকি মিষ্টি।
কখন চিকিৎসক দেখাবেন
এর তেমন কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন নেই। তবে কারও যদি ছত্রাক সংক্রমণের লক্ষণ থাকে, তখন তার চিকিৎসা নিতে হবে।
চিকিৎসা
এই রোগের সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। শিশুকে বেশি পরিমাণ তরল খাবার খাওয়াবেন। যেমন বাসায় বানানো জুস, স্যুপ, ডাবের পানি। কম মসলাযুক্ত ও ঝাল ছাড়া খাবার দেবেন। মুখের যত্ন নিতে হবে। খাবারের পর কুলি করতে হবে। প্রয়োজন হলে মুখ পরিষ্কারক ওষুধ দিয়ে দিনে তিন–চারবার কুলি করতে হবে। কিছু ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট দেওয়া যেতে পারে। যেমন বি কমপ্লেক্স, মাল্টিভিটামিন, জিংক সিরাপ। এগুলো দিলে বাচ্চার পুষ্টির ঘাটতি পূরণ হবে। বেশি ব্যথা হলে প্যারাসিটামল সিরাপ দেওয়া যেতে পারে।
জটিলতা
খাওয়ার সময় অস্বস্তি, ভিন্ন রকম স্বাদের অনুভূতি হতে পারে।
ডা. ইমনুল ইসলাম
অধ্যাপক, শিশু বিভাগ, বিএসএমএমইউ